Childhood লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Childhood লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৮ ফেব, ২০১৬

মস্ত গাছ ও ছোট্ট পাখি

                    
এক ছিল মস্ত উঁচু গাছ, আর তার চারপাশে ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি। বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গাছ ভাবত --

                              ভয় ভাবনা নেইকো আমার কিছু।
                              সবার থেকে লম্বা আমি, সবার থেকে উঁচু।

       একদিন সকাল বেলা গাছ দেখলে , সামনের জমিটায় অনেক লোহা-লক্কড় , যন্ত্রপাতি আর লোকজন।  দেখতে দেখতে সেই লোহা-লক্কড়  দিয়ে লোকজনেরা এক প্রকাণ্ড লোহার থাম তৈরী করে ফেললে।  থামটা হল গাছের চেয়ে আরও অনেক অনেক উঁচু। 

         গাছের মনে খুব দুঃখ হল। তার ডাল বেয়ে পাতা বেয়ে তপ্তপ করে জল পড়তে লাগল।এক ছোট্ট  পাখি  সেখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। গাছকে কাঁদতে দেখে পাখি বললে -

                                মিথ্যে কেন ফেলছ চোখের জল ?
                                ওর  কি আছে তোমার মতো  ডাল পাতা ফুল ফল ?
                                                                                                                                                                        
গাছ বললে , তাই তো , ঠিক তো , সত্যি তো।!

                               এমনি বোকা আমি। 
                               কাঁদতে কাঁদতে মরেই যেতুম ভাগ্যি ছিলে  তুমি। 

       এই বলে, রোদের ফুলকাটা হাওয়ার রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছে-টুছে গাছ মনের আনন্দে ডাল নাচাতে লাগল, আর ছোট্ট পাখি তার ওপর বসে বসে দোল খেতে লাগল। 

 --গৌরী  ধর্মপাল --

১৪ ফেব, ২০১৬

কোকিল

               Image result for kokila bird drawing
এক কোকিল আর এক কোকিলনী। 
বসন্তকাল এসেছে। কোকিল আমগাছের দলে বসে গান গাইছে কু-উ    কু-উ    কু-উ।আর মাঝে মাঝে  কোকিলনীকে বলছে , কোকিলনী , তুই ডিম পাড়বি না ?

তিনবার চারবার এই রকম বলার পর কোকিলনী মাথা ঝাঁকিয়ে বলছে, ডিম আমার পাড়া হয়ে গেছে। 
-- কোথায়ে  পাড়লি ? কখন পাড়লি ?
--ঐ তালগাছের মাথায় কাকেদের বাসায় কাল মাঝরাতে চুপিচুপি পেড়ে এসেছি। 

শুনে তো কোকিল খুব রেগে গেছে , আর বলছে,

এঁটো কাঁতা বাসি পচা ধসা ছাড়া খায় না 
গান যদি শুরু করে কান পাতা যায় না 
একটি মাত্র চোখ --
অতি অভদ্র লোক --

সেই তাদের বাসায় তুই ডিম পেড়ে  এলি ? ঐ  নোংরা কাক-বৌয়ের তা-য়  ফুটবে আমার ছানা ? তা-ও যদি দাঁড়কাক হত। যা, ডিম ফেরত নিয়ে আয়। 
শুনে তখন কোকিলনী বলছে,

ডিম ফুটানোর কী-ই বা আমি জানি ?
যা করেছে মা-ঠাকুমা, তাই করেছি আমি। 

তখন কোকিল বললে,

তা হলে আর মিথ্যে ঘামি ?
যা করেছে বাপ-পিতমো  তাই করি গে আমি। 

বলে গাছের উঁচু ডালে গিয়ে বসল  আর গলা ছেড়ে গান গাইতে লাগল--
কু-উ  কু-উ  কু-উ  কু-উ। 

--গৌরী  ধর্মপাল --

১২ ফেব, ২০১৬

বক-বকী


এক বক। 
সে পুকুর পাড়ে  থাকে আর মাছ ধরে ধরে খায় -- 
কপ কপ কপ কপ কপ কপ কপ কপ। .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

খেয়ে খেয়ে বক এত মোটা  হল  যে আর উড়তেও পারে না, চলতেও পারে না।  তখন বক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মাছ ধরে ধরে খায় --
কপ কপ কপ কপ কপ কপ। .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

খেয়ে খেয়ে বক এত মোটা  হল  যে আর দাঁড়াতেও পারে না। তখন বক বসে বসেই মাছ ধরে ধরে খায় --
কপ কপ কপ কপ । .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

খেয়ে খেয়ে বক এত মোটা  হল  যে আর বসতেও পারে না। তখন বক শুয়ে শুয়েই মাছ ধরে ধরে খায় --
কপ কপ । .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

শেষকালে বক এত মোটা  হয়ে গেল যে চোক পজ্জন্ত খুলতে পারে না।  তখন বক ঘু-মি-য়ে  পড়ল। 

বক ঘুমোয়। 

বক-বৌ  তার পাশে দাঁড়িয়ে বাঁশপাতা দিয়ে হাওয়া করে আর কাঁদে  আর ভাবে --
আহা, তখন কেন বারণ করি নি ?
কাঁদতে কাঁদতে কাঁদতে কাঁদতে  বক বৌ  এর চোকের  জলও ফুরিয়েচে  আর  বকেরও ঘুম ভেঙেছে। 
চোক  রগড়াতে রগড়াতে বক বলচে , বউ , খিদে। 
বৌ  বলচে , উঁহু,এখন নয়। 

একদিন যায়। দুদিন যায়।  বক উঠে দাঁড়িয়েছে।  বলচে , বৌ , বড্ড খিদে।
বৌ বলচে , উঁহুহু , এখনো নয়। 

একদিন যায়।  বক হাঁটতে হাঁটতে একেবারে জলের ধারে  এসে বলচে, আর পারচিনে , বৌ।  ধরি ?
বৌ বলচে, আর একটু সবুর কর। 
পরের দিন বক বললে, এবার ফু দিলেই উড়ে যাব রে বৌ , ডানা আর নাড়তে হবে না। 

বৌ  বললে , ডানা তোমায় নাড়তে হবে না। ঐ  তো বাতাস ফু দিয়েচে। ওড়। 
নলখাগড়ার বন শিরশির করে উঠল।  বক উড়ল। 
বৌ-ও উড়ল সঙ্গে সঙ্গে। 
বৌ  বললে, কি ? খিদে পাচ্চে ?
বক বললে, দাঁড়া, আর একটু উড়ে নিই।  আঃ বাঁচালি বৌ। 

--গৌরী ধর্মপাল--


১১ ফেব, ২০১৬

কচি

                                                   
পাহাড় ঘেঁষে সরল গাছের বন। সেই বনের ধারে  ফুলকো ঘাসের ঝোপে থাকে এক কচি হরিণ আর তার মা-বাবা। 
মার কোল ঘেঁষে বসে কচি দূরের  পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে আর বলে , আমরা কবে পাহাড়ে যাব মা ?
মা বলে , একটু বড় হ, পায়ে জোর হোক, দম বাড়ুক , বুদ্ধি পাকুক, তবে তো ?

একদিন কচির বাবা দূরের ঘাসবনে চড়তে গেছে , কচি মার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে একটু করে ঘাস খাচ্ছে আর একটু করে পোকামাকড় মাটি গাছপালা এসব চিনছে , এমন সময় মা হঠাত্  খাওয়া থামিয়ে কান খাড়া করে ফিসফিসিয়ে বললে, শুনতে পাচ্ছিস ?

কচি সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়  সোজা কান খাড়া করে বললে, হ্যা মা, পাচ্ছি। কিসের শব্দ মা ?
মা বললে , এক্ষুনি দেখতে পাবি।  তার আগে আয় লুকোই। একটু পরেই গো -গো  করতে করতে আট-দশখানা মাল-বোঝাই মানুষ-বোঝাই জিপগাড়ি ধুলো উড়িয়ে পাহাড়ের দিকে চলে গেল। 
কচি বললে , ওরা কোথায়ে যাচ্ছে মা ? 

মা বললে, ওরা পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছে। 

সঙ্গে সঙ্গে কচি 'আমিও পাহাড়ে যাব মা ' বলে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসে গাড়ির পেছন পেছন ছুটতে আরম্ভ করলে। মা অনেক ছুটেও কচিকে ধরতে পারলে না।  কচি লাফ দিয়ে পিছনের গাড়িটায় উঠে পড়ল। 

গাড়ির লোকেরা তো কচির কান্ড দেখে অবাক।  কচিকে নিয়ে তারা কী  করবে ভাবছে, এমন সময় কচির মাকে পাগলের মত ছুটে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি  গাড়ি থামিয়ে তারা কচিকে পাঁজাকোলা করে ধরে নামিয়ে দিল। কচি খুব পা ছুড়তে লাগল , কিছুতেই নামবে না। শেষকালে একজন বন্দুক তুলে যেই না গুরুম করে আওয়াজ করেছে, অমনি কচি ভয় পেয়ে তড়াক করে লাফিয়ে পড়ে পো পা দৌড়।

বিকেলবেলা বাবা এসে সব শুনে-টুনে বললে,


                                সাহস তো তোর্ ভালই দেখছি,

                                             দৌড়সও  তো ভালই। 
                                সঙ্গে একটু বুদ্ধি জুড়লে 
                                             ফলটা হবে আরোই। 
                                কাল থেকে চল আমার সঙ্গে 
                                            যাবি  দূরের বনে। 
                                একে একে সাধ মেটাব 
                                            যা আছে তোর মনে। 
                                পুতুপুতু  করব না আর,
                                            আর না দুরুদুরু। 
                                 বারদুনিয়ায়  কাল থেকে তোর 
                                            নতুন জীবন শুরু। 

কচি বললে , হ্যা বাবা , মাও যাবে তো ?

বাবা বললে, সে কি রে ?

                          আমি যাব তুই যাবি মা যাবে না ?

                          আমি পাব তুই পাবি মা পাবে না ?
                          মা না হলে ঘুম পেলে কি হবে উপায় ?
                          শিং  দিয়ে চুলকে কে দেবে তর গায়ে ?
                          ঘাস থেকে কাঁটা বেছে দেবে কে ?
                          পাতা-গলা ঘোলা জল সেঁচে দেবে কে ?
                          মা যদি না বুড়ি হয়, বোকারাম ওরে,
                          তুই-আমি ছুটোছুটি খেলব কি করে ?


কচি তখন  'আমিও তো তাই বলছিলুম ' বলে মার কোলে মুখ লুকালো।  আর বাবার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল মা। 


                                -- গৌরী ধর্মপাল --

৮ ফেব, ২০১৬

বাঘা

 
একটা ছেলে ছিল। 
সেই ছেলেটা একদিন ভাত খেতে বসে মা কে বললে , মা আমি বাঘ ভাজা খাব। 
মা বললে, বাঘ ভাজা খেতে হলে উনুন চাই এত্তো খানি, কড়াই চাই এত্তো বড়,
সরষের তেল চাই এক চৌবাচ্চা!! আমি গরীব মানুষ,এত সব কোথায় পাব বাবা?

ছেলে মুখ গোঁজ করে রইল।  অগত্যা মা বললে, আচ্ছা আমি এদিকে সব যোগাড়
দেখি গে। তুমি শিকারী বাড়ি গিয়ে বাঘের খোঁজ-খবর কর। 


ছেলেটা নাচতে নাচতে শিকারী বাড়ি  গেল। 

শিকারী সব শুনে হো-হো করে হাসতে লেগেছে, তখন শিকারীর মা এসে তাকে খুব
ধমক দিয়ে ছেলেটাকে ঘরের ভিতরে দেকে নিয়ে গিয়ে বললে, তুমি এতটুকুন ছেলে,

তুমি কি আর এতবড় বাঘ খেতে পার বাবা!! তোমার জন্য আমি একটা কচি বাঘ 
ভেজে দিচ্ছি, খুশিমতন খাও। 

এই বলে ক্ষীর ছানা এলাচ কপ্পুর দিয়ে একটি ছোট্ট বাঘ গড়ে , সেইটি ভেজে 
খোকাকে খেতে দিয়েছে। 

এদিকে হয়েছে কি.....শিকারী ঘরের পাশে এক সুড়ঙ্গের মধ্যে থাকত এক বাঘিনী 
আর তার বাচ্চা। ছেলেটা যেই পা খেয়েছে, অমনি বাঘের বাচ্চাটা বাচ্চাটা মা কে 
বলছে,মা, পা গেল, পা গেল। বাঘিনী দেখছে ,তাই তো !!

এমনি করতে করতে ছেলেটা যেই মাথা খেতে হাঁ করেছে, তখন বাঘিনী দেখলে, সব
তো যায়!!বাঘিনী এক লাফ দিয়ে পড়েছে ছেলেটার সামনে, -- দোহাই বাবা ছেড়ে দে। 



তখন ছেলেটা বললে, রোজ রাতে যদি আমাদের বাড়ি পাহাড়া দাও, আর যে চোর 
আমাদের সব চুরি করে নিয়ে গেছে, তার ঠ্যাংটি খোঁড়া করে দাও, আর বন থেকে মাযের 

রান্নার কাঠকুটো বয়ে এনে দাও, তাহলে ছাড়ব,  নাহলে নয়। 

বাঘিনী বললে, সব করব বাবা, সব করব। 

ছেলেটা তখন বাঘের মুড়ো বাঘকে ফিরিয়ে দিয়ে দিলে, আর বাঘিনীর পিঠে চড়ে বাড়ি 
এসে বললে , মা , মা, দেখে যাও!!

সেই থেকে সবাই তাকে বাঘা  বলে ডাকত।
 
--গৌরী ধর্মপাল--

৫ ফেব, ২০১৬

আমাদের গ্রাম


আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে, নাহি কেহ পর। 
পাড়ার সকল ছেলে মোরা  ভাইভাই,
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই। 
হিংসা ও মারামারি কভু নাহি করি,
পিতামাতা গুরুজনে সদা মোরা ডরি। 
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচায়েছে প্রাণ। 
মাঠ ভরা ধান আর জল ভরা দিঘী ,
চাঁদের  কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি। 
আম গাছ ,জাম গাছ , বাঁশঝাড়  যেন,
মিলে  মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন। 
সকালে সোনার রবি পূব দিকে ওঠে ,
পাখি ডাকে , বায়ু বয় ,নানা ফুল ফোটে। 

 --বন্দে আলি মিঞা --

২ ফেব, ২০১৬

হাসিখুশি থেকে .... (৩)

- কাকাতুয়ার মাথায় ঝুঁটি 
- খ্যাঁকশিয়ালি পালায় ছুটি 
- গরু বাছুর দাড়িয়ে আছে 
- ঘুঘুপাখি ডাকছে গাছে 
- ঙ নৌকা মাঝি ব্যাঙ 
- চিতা বাঘের সরু ঠ্যাং 
- ছাগলছানা লাফিয়ে চলে 
- জাহাজ ভাসে সাগর জলে 

- ঝাড়ু  হাতে এল  কানাই 
- ঞ চড়ে নাচছে দুভাই  
- টিয়া পাখির ঠোঁটটি লাল 
- ঠাকুরদাদার শুকনো গাল 
- ডুলি কাঁধে বেহারা যায় 
- ঢুলিভায়া ঢোলক বাজায়
- [মূর্ধন্য]ণ নাকের 'পরে 
- তিমি আপন শিকার ধরে 
- থালা ভরা আছে মিঠাই 
- দোয়াত আছে কালি নাই 
- ধোপা কেমন কাপড় কাচে 
- নাপিতভায়া দাড়ি চাঁচে 
- পাখির বাসা হাওয়ায় নড়ে 
- ফোয়ারা হতে জল পড়ে 
- বুলবুলিটির মুখটি কালো 
- ভালুক জানে বাসতে ভালো 
- ময়ূর নাচে পেখম ধরে 
-  যাতা ঘোরে হাতের জোরে
- রাজহাঁসটির  গলা সরু 
- লাঠির চোটে পালায় গরু 
- বাঘের যত সাহস চোখে 
- শকুন কাঁদে গরুর শোকে 
- ষাঁড় ছুটেছে পুকুরপাড়ে 
- সিংহ রাগে কেশর নাড়ে 
- হাসি মুখটি দেখতে বেশ 
- ড়-এর দফা হলো শেষ 
ঢ়-এর মাথা কামড়ে খায়
- [খণ্ড-ত]ৎ ঐ পুষির গায়
- য় ছিল তাই  গেল বেঁচে 

- [অনুস্বার] ং-টি হারিয়ে গেছে 
- [বিসর্গ] ঃ-এর ভুঁড় পেট 

- [চন্দ্রবিন্দু] ঁ-র মাথা হেঁট 



--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --


মামার বাড়ি

 
মামাদের দরজায় 
বাঘা থাকে এক;
তেড়ে  নাহি আসে , নাহি 
করে ভেক ভেক। 
 
 
মামাদের পুকুরেতে 
আছে বড় রুই;
পশু আর মাছে মিলে 
একে একে দুই। 
 
মামাদের বাগানেতে 
চরিছে হরিণ ;
দুই পশু এক মাছ-
দুয়ে একে তিন। 

মামাদের রাঙা গরু 
কিবা রূপ তার;
তিন পশু এক মাছ 
তিনে একে চার। 
 
মামাদের  বানরের 
কি মজার নাচ;
চার পশু এক মাছ 
চারে একে পাঁচ। 
 
মামাদের সাদা ভেড়া 
উঠানেতে রয়;
পাঁচ পশু এক মাছ 
পাঁচে একে ছয়। 
 

মামাদের খরগোশ 
চাটে  এসে হাত;
ছয় পশু এক মাছ 
ছয় একে সাত। 
 
মামাদের পোষা মেনি 
যেন বড়লাট;
সাত পশু এক মাছ 
সাতে একে আট। 


মামাদের রাজহাঁস 
পুকুরেতে রয়;
পশু, পাখি, মাছে মিলে 
আটে একে নয়। 
 
মামাদের চাকরের 
হয়েছে বয়স;
সবে তারে ভালবাসে 
নয়ে  একে দশ। 

--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --

১ ফেব, ২০১৬

দশটি ছেলে

হারাধনের দশটি ছেলে 
ঘোরে পাড়াময় ,
একটি কোথা হারিয়ে গেল 
রইল  বাকি নয়। 

হারাধনের নয়টি ছেলে 
কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দুখান হল 
রইল  বাকি আট। 

হারাধনের আটটি ছেলে 
বসল খেতে ভাত ,
একটির পেট ফেটে গেল 
রইল বাকি সাত। 

হারাধনের সাতটি ছেলে 
গেল জলাশয় ,
একটি সেথা ডুবে ম'ল 
রইল বাকি ছয়। 

হারাধনের ছয়টি ছেলে
চড়তে গেল গাছ ,
একটি ম'ল পিছলে পড়ে 
রইল বাকি পাঁচ। 

হারাধনের পাঁচটি ছেলে 
গেল বনের ধার,
একটি গেল বাঘের পেটে 
রইল বাকি চার। 

হারাধনের চারটি ছেলে 
নাচে ধিন ধিন,
একটি ম'ল আছাড়  খেয়ে 
রইল  বাকি তিন। 

হারাধনের তিনটি ছেলে 
ধরতে গেল রুই,
একটি খেল বোয়াল মাছে 
রইল বাকি দুই। 

হারাধনের দুইটি ছেলে 
মারতে গেল ভেক ,
একটি ম'ল সাপের বিষে 
রইল বাকি এক। 

হারাধনের একটি ছেলে 
কাঁদে ভেউ ভেউ ,
মনের দুঃখে বনে গেল 
রইল না আর কেউ। 

--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --

হাসিখুশি থেকে ....

- অজগর আসছে তেড়ে 
- আমটি আমি খাব পেড়ে 
-  ইঁদুরছানা ভয়ে মরে 
 - ঈগল পাখি পাছে ধরে 
- উট চলেছে মুখটি তুলে 
- [দীর্ঘ ] ঊ -টি আছে ঝুলে 
- ঋষি মশাই বসেন পূজায় 
- ঌ -কার যেন ডিগবাজি খায় 
- এক্কা গাড়ি খুব ছুটেছে
- ঐ দেখ ভাই চাঁদ উঠেছে 
- ওল খেয়ো না ধরবে গলা 
- ঔষধ খেতে মিছে বলা 

--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --


তাঁতীর বাড়ি

 
 
তাঁতীর বাড়ি ব্যাঙ-এর বাসা
কোলা ব্যাঙ-এর ছা,
খায় দায় গান গায়
তাই রে নাই রে না।।

হাট্টিমাটিমটিম

 
হাট্টিমা টিম টিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমা টিম টিম।।

কাক

 
কুচকুচে কালো রঙ
কর্কশ ডাক,
সারাদিন দুষ্টুমি
দজ্জাল কাক।
পেটুকের শিরোমণি
দিনভর চুরি,
উঁকিঝুঁকি ঘরে-ঘরে
শুধু ঘোরাঘুরি।
খাবার দেখলে পরে
মিটিমিটি চায়,
ফাঁক পেলে ঠোঁটে নিয়ে
তখুনি পালায়।।

 

টিয়া

 
 
টিয়ারাণী টিয়ারাণী
গায়ে সবুজ শাড়িখানি,
রঙ মেখেছে রাঙ্গা ঠোঁটে
দেখো কেমন বাহার ফোটে।
বসে আছে বিয়ের কনে
সেজেগুজে আপন মনে।
টিয়া কথা কইতে পারে,
শিখিয়ে দিলে বুলি তারে।

কোকিল

 
কুহু কুহু কোকিল ডাকে
আমগাছের ফাঁকে ফাঁকে।
মুকুল এল ফাগুন মাসে,
খবর পেয়ে কোকিল আসে।
কাকের বাসায় ডিম পেড়ে,
কোকিল পালায় দেশ ছেড়ে।
কাকে পোষে কোকিল ছানা,
এই কথাটি সবার জানা।


কাকাতুয়া

 
 
ঠিক যেন রামদিন
দারোয়ান হাঁকে রে!
কৌন হ্যায় কৌন হ্যায়
কোন পাখি ডাকে রে?
পাখিদের দারোয়ান
কাকাতুয়া নাম তার,
দেখো চেয়ে পরিপাটি
পোশাকের কি বাহার! 

নোটন নোটন পায়রাগুলি

 
নোটন নোটন পায়রাগুলি ঝোঁটন বেঁধেছে

ওপারেতে ছেলেমেয়ে নাইতে নেমেছে।
দুই পারে দুই রুই কাতলা ভেসে উঠেছে,
কে দেখেছে? কে দেখেছে? দাদা দেখেছে।
দাদার হাতে কলম ছিল ছুঁড়ে মেরেছে
উঃ দাদা! বড্ড লেগেছে।।            

প্যাঁচা আর প্যাঁচানি

 

প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি,
খাসা তোর চ্যাঁচানি!
শুনে শুনে আনমন
নাচে মোর প্রাণমন!
মাজা গলা চাঁচা সুর
আহ্লাদে ভরপুর!
গলা-চেরা ধমকে
গাছপালা চমকে,
সুরে সুরে কত প্যাঁচ
গিটকিরি ক্যাঁচ্‌ ক্যাঁচ্‌!
যত ভয় যত দুখ
দুরু দুরু ধুক্‌ ধুক্‌,
তোর গানে পেঁচি রে
সব ভুলে গেছি রে-
চাঁদ মুখে মিঠে গান
শুনে ঝরে দু'নয়ান।।
 
--সুকুমার রায়--

৩০ জানু, ২০১৬

খিচুড়ি

হাঁস ছিল, সজারুও, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে "বাহবা কি ফূর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।" 
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা-
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে; ধড়ে মুড়ো সন্ধি!
জিরাফের সাধ নাই মাঠে-ঘাটে ঘুরিতে,
ফড়িং-এর ঢং ধরি সেও চায় উড়িতে।
গরু বলে, "আমারেও ধরিল কি ও রোগে?
মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে?"
'হাতিমির দশা দেখ- তিমি ভাবে জলে যাই,
হাতি বলে, "এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই।"
সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট-
হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট। 

আকাশের গায়ে

 

আকাশের গায়ে কিবা রামধনু খেলে,
দেখে চেয়ে কত লোক সব কাজ ফেলে;
তাই দেখে খুঁৎ-ধরা বুড়ো কয় চটে,
দেখছ কি এই রঙ পাকা নয় মোটে।।
 
--সুকুমার রায়--