gouri dhormopal লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
gouri dhormopal লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৮ ফেব, ২০১৬

মস্ত গাছ ও ছোট্ট পাখি

                    
এক ছিল মস্ত উঁচু গাছ, আর তার চারপাশে ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি। বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গাছ ভাবত --

                              ভয় ভাবনা নেইকো আমার কিছু।
                              সবার থেকে লম্বা আমি, সবার থেকে উঁচু।

       একদিন সকাল বেলা গাছ দেখলে , সামনের জমিটায় অনেক লোহা-লক্কড় , যন্ত্রপাতি আর লোকজন।  দেখতে দেখতে সেই লোহা-লক্কড়  দিয়ে লোকজনেরা এক প্রকাণ্ড লোহার থাম তৈরী করে ফেললে।  থামটা হল গাছের চেয়ে আরও অনেক অনেক উঁচু। 

         গাছের মনে খুব দুঃখ হল। তার ডাল বেয়ে পাতা বেয়ে তপ্তপ করে জল পড়তে লাগল।এক ছোট্ট  পাখি  সেখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। গাছকে কাঁদতে দেখে পাখি বললে -

                                মিথ্যে কেন ফেলছ চোখের জল ?
                                ওর  কি আছে তোমার মতো  ডাল পাতা ফুল ফল ?
                                                                                                                                                                        
গাছ বললে , তাই তো , ঠিক তো , সত্যি তো।!

                               এমনি বোকা আমি। 
                               কাঁদতে কাঁদতে মরেই যেতুম ভাগ্যি ছিলে  তুমি। 

       এই বলে, রোদের ফুলকাটা হাওয়ার রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছে-টুছে গাছ মনের আনন্দে ডাল নাচাতে লাগল, আর ছোট্ট পাখি তার ওপর বসে বসে দোল খেতে লাগল। 

 --গৌরী  ধর্মপাল --

১৪ ফেব, ২০১৬

কোকিল

               Image result for kokila bird drawing
এক কোকিল আর এক কোকিলনী। 
বসন্তকাল এসেছে। কোকিল আমগাছের দলে বসে গান গাইছে কু-উ    কু-উ    কু-উ।আর মাঝে মাঝে  কোকিলনীকে বলছে , কোকিলনী , তুই ডিম পাড়বি না ?

তিনবার চারবার এই রকম বলার পর কোকিলনী মাথা ঝাঁকিয়ে বলছে, ডিম আমার পাড়া হয়ে গেছে। 
-- কোথায়ে  পাড়লি ? কখন পাড়লি ?
--ঐ তালগাছের মাথায় কাকেদের বাসায় কাল মাঝরাতে চুপিচুপি পেড়ে এসেছি। 

শুনে তো কোকিল খুব রেগে গেছে , আর বলছে,

এঁটো কাঁতা বাসি পচা ধসা ছাড়া খায় না 
গান যদি শুরু করে কান পাতা যায় না 
একটি মাত্র চোখ --
অতি অভদ্র লোক --

সেই তাদের বাসায় তুই ডিম পেড়ে  এলি ? ঐ  নোংরা কাক-বৌয়ের তা-য়  ফুটবে আমার ছানা ? তা-ও যদি দাঁড়কাক হত। যা, ডিম ফেরত নিয়ে আয়। 
শুনে তখন কোকিলনী বলছে,

ডিম ফুটানোর কী-ই বা আমি জানি ?
যা করেছে মা-ঠাকুমা, তাই করেছি আমি। 

তখন কোকিল বললে,

তা হলে আর মিথ্যে ঘামি ?
যা করেছে বাপ-পিতমো  তাই করি গে আমি। 

বলে গাছের উঁচু ডালে গিয়ে বসল  আর গলা ছেড়ে গান গাইতে লাগল--
কু-উ  কু-উ  কু-উ  কু-উ। 

--গৌরী  ধর্মপাল --

১৩ ফেব, ২০১৬

দুই শেয়াল

                          

এক বনের মধ্যে পাশাপাশি দুই গর্তে দুই শেয়াল থাকত।  একজনের নাম একশেয়াল , আর একজনের নাম খেঁকশেয়াল। একদিন একশেয়াল খেঁকশেয়ালকে বললে -- দাদা, এ বনের চৌহদ্দি কত, তুমি জানো ?
খেঁকশেয়াল বললে , তা আর জানি না ? তোর পায়ের একশ পা চওড়া  আর আমার পায়ের একশ পা লম্বা -- এই হল এ বনের চৌহদ্দি। এক্কেবার পাক্কা হিসাব।
একশেয়াল বললে, আর বনে কত গুলো গাছ আছে, দাদা, গুনে দেখেছ ?
খেঁকশেয়াল বললে, তা আর গুনি নি ? তাহলে মাঝে মাঝে যে একা-একা ইদিক-বিদিক ঘুরে বেড়াই , সে কিসের জন্যে ?
শোন, তোর্ গায়ে যতগুলো লোম, ততগুলো গাছ।একটা কম না , একটা বেশী না। 
একশেয়াল বললে, দাদা , লোম যদি খসে ?
-- তাহলে বুঝবি, একটা গাছ খসল। 
-- আর লোম যদি গজায় ?
-- তাহলে বুঝবি গাছ গজালো।  এক্কেবারে পাক্কা হিসেব।  এদিক ওদিক হবার যো নেই। 

একদিন একশেয়াল আর খেঁকশেয়াল গর্তে ঘুমিয়ে আছে, আর বনে তো আগুন লেগেছে।  তখন খেঁকশেয়াল তাড়াতাড়ি একশেয়ালকে ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে বলছে , ওরে আগুন আগুন ! পালা পালা পালা। 

বনের গাছপালা পুড়ছে, একশেয়াল  খেঁকশেয়াল দৌড়াচ্ছে, আর থেকে থেকে থমকে থেমে একশেয়াল বলছে, দাদা, একশ ছেড়ে দুশ হল, তিন-চার-পাঁচ-সাতশ হল, বন তো কি ফুরোল না ?  খেঁকশেয়াল বলছে, ফুরোবে বাবা ফুরোবে , তুই দৌড় না।  কুড়োতে কুড়োতে বুড়োয় , দৌড়তে দৌড়তে ফুরোয়। 

একশেয়াল  আবার দৌড়চ্ছে, আবার থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে বলছে --
               বন তো সাবাড় 
               গাছ তো কাবার 
               লোম তো দাদা খসছে না !
               হিসেব তো কই মিলছে না !

তখন খেঁকশেয়ালবললে , ওরে পাগলা , দেখছিস না ,

              জ্বলছে আগুন লকলকিয়ে, হিসেব পুড়ে  ছাই। 
             ভাবনা ছেড়ে দৌড়ে  আগে প্রাণ বাঁচা না ভাই।

তখন একশেয়াল  বললে, সত্যি আমি কি বোকা। 
খেঁকশেয়াল বললে , সে কথা য়্যাদ্দিনে বুঝলি ?
তারপর দুজনে মিলে  দৌড়  দৌড়  দৌড় !

--গৌরী ধর্মপাল--

১২ ফেব, ২০১৬

বক-বকী


এক বক। 
সে পুকুর পাড়ে  থাকে আর মাছ ধরে ধরে খায় -- 
কপ কপ কপ কপ কপ কপ কপ কপ। .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

খেয়ে খেয়ে বক এত মোটা  হল  যে আর উড়তেও পারে না, চলতেও পারে না।  তখন বক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মাছ ধরে ধরে খায় --
কপ কপ কপ কপ কপ কপ। .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

খেয়ে খেয়ে বক এত মোটা  হল  যে আর দাঁড়াতেও পারে না। তখন বক বসে বসেই মাছ ধরে ধরে খায় --
কপ কপ কপ কপ । .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

খেয়ে খেয়ে বক এত মোটা  হল  যে আর বসতেও পারে না। তখন বক শুয়ে শুয়েই মাছ ধরে ধরে খায় --
কপ কপ । .......
ছোট মাছ বড় মাছ রোগা মাছ মোটা মাছ  লাল মাছ নীল মাছ বেলে মাছ গুলে মাছ। 
খায় আর মোটা  হয়। 

শেষকালে বক এত মোটা  হয়ে গেল যে চোক পজ্জন্ত খুলতে পারে না।  তখন বক ঘু-মি-য়ে  পড়ল। 

বক ঘুমোয়। 

বক-বৌ  তার পাশে দাঁড়িয়ে বাঁশপাতা দিয়ে হাওয়া করে আর কাঁদে  আর ভাবে --
আহা, তখন কেন বারণ করি নি ?
কাঁদতে কাঁদতে কাঁদতে কাঁদতে  বক বৌ  এর চোকের  জলও ফুরিয়েচে  আর  বকেরও ঘুম ভেঙেছে। 
চোক  রগড়াতে রগড়াতে বক বলচে , বউ , খিদে। 
বৌ  বলচে , উঁহু,এখন নয়। 

একদিন যায়। দুদিন যায়।  বক উঠে দাঁড়িয়েছে।  বলচে , বৌ , বড্ড খিদে।
বৌ বলচে , উঁহুহু , এখনো নয়। 

একদিন যায়।  বক হাঁটতে হাঁটতে একেবারে জলের ধারে  এসে বলচে, আর পারচিনে , বৌ।  ধরি ?
বৌ বলচে, আর একটু সবুর কর। 
পরের দিন বক বললে, এবার ফু দিলেই উড়ে যাব রে বৌ , ডানা আর নাড়তে হবে না। 

বৌ  বললে , ডানা তোমায় নাড়তে হবে না। ঐ  তো বাতাস ফু দিয়েচে। ওড়। 
নলখাগড়ার বন শিরশির করে উঠল।  বক উড়ল। 
বৌ-ও উড়ল সঙ্গে সঙ্গে। 
বৌ  বললে, কি ? খিদে পাচ্চে ?
বক বললে, দাঁড়া, আর একটু উড়ে নিই।  আঃ বাঁচালি বৌ। 

--গৌরী ধর্মপাল--


১১ ফেব, ২০১৬

কচি

                                                   
পাহাড় ঘেঁষে সরল গাছের বন। সেই বনের ধারে  ফুলকো ঘাসের ঝোপে থাকে এক কচি হরিণ আর তার মা-বাবা। 
মার কোল ঘেঁষে বসে কচি দূরের  পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে আর বলে , আমরা কবে পাহাড়ে যাব মা ?
মা বলে , একটু বড় হ, পায়ে জোর হোক, দম বাড়ুক , বুদ্ধি পাকুক, তবে তো ?

একদিন কচির বাবা দূরের ঘাসবনে চড়তে গেছে , কচি মার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে একটু করে ঘাস খাচ্ছে আর একটু করে পোকামাকড় মাটি গাছপালা এসব চিনছে , এমন সময় মা হঠাত্  খাওয়া থামিয়ে কান খাড়া করে ফিসফিসিয়ে বললে, শুনতে পাচ্ছিস ?

কচি সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়  সোজা কান খাড়া করে বললে, হ্যা মা, পাচ্ছি। কিসের শব্দ মা ?
মা বললে , এক্ষুনি দেখতে পাবি।  তার আগে আয় লুকোই। একটু পরেই গো -গো  করতে করতে আট-দশখানা মাল-বোঝাই মানুষ-বোঝাই জিপগাড়ি ধুলো উড়িয়ে পাহাড়ের দিকে চলে গেল। 
কচি বললে , ওরা কোথায়ে যাচ্ছে মা ? 

মা বললে, ওরা পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছে। 

সঙ্গে সঙ্গে কচি 'আমিও পাহাড়ে যাব মা ' বলে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসে গাড়ির পেছন পেছন ছুটতে আরম্ভ করলে। মা অনেক ছুটেও কচিকে ধরতে পারলে না।  কচি লাফ দিয়ে পিছনের গাড়িটায় উঠে পড়ল। 

গাড়ির লোকেরা তো কচির কান্ড দেখে অবাক।  কচিকে নিয়ে তারা কী  করবে ভাবছে, এমন সময় কচির মাকে পাগলের মত ছুটে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি  গাড়ি থামিয়ে তারা কচিকে পাঁজাকোলা করে ধরে নামিয়ে দিল। কচি খুব পা ছুড়তে লাগল , কিছুতেই নামবে না। শেষকালে একজন বন্দুক তুলে যেই না গুরুম করে আওয়াজ করেছে, অমনি কচি ভয় পেয়ে তড়াক করে লাফিয়ে পড়ে পো পা দৌড়।

বিকেলবেলা বাবা এসে সব শুনে-টুনে বললে,


                                সাহস তো তোর্ ভালই দেখছি,

                                             দৌড়সও  তো ভালই। 
                                সঙ্গে একটু বুদ্ধি জুড়লে 
                                             ফলটা হবে আরোই। 
                                কাল থেকে চল আমার সঙ্গে 
                                            যাবি  দূরের বনে। 
                                একে একে সাধ মেটাব 
                                            যা আছে তোর মনে। 
                                পুতুপুতু  করব না আর,
                                            আর না দুরুদুরু। 
                                 বারদুনিয়ায়  কাল থেকে তোর 
                                            নতুন জীবন শুরু। 

কচি বললে , হ্যা বাবা , মাও যাবে তো ?

বাবা বললে, সে কি রে ?

                          আমি যাব তুই যাবি মা যাবে না ?

                          আমি পাব তুই পাবি মা পাবে না ?
                          মা না হলে ঘুম পেলে কি হবে উপায় ?
                          শিং  দিয়ে চুলকে কে দেবে তর গায়ে ?
                          ঘাস থেকে কাঁটা বেছে দেবে কে ?
                          পাতা-গলা ঘোলা জল সেঁচে দেবে কে ?
                          মা যদি না বুড়ি হয়, বোকারাম ওরে,
                          তুই-আমি ছুটোছুটি খেলব কি করে ?


কচি তখন  'আমিও তো তাই বলছিলুম ' বলে মার কোলে মুখ লুকালো।  আর বাবার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল মা। 


                                -- গৌরী ধর্মপাল --

৮ ফেব, ২০১৬

বাঘা

 
একটা ছেলে ছিল। 
সেই ছেলেটা একদিন ভাত খেতে বসে মা কে বললে , মা আমি বাঘ ভাজা খাব। 
মা বললে, বাঘ ভাজা খেতে হলে উনুন চাই এত্তো খানি, কড়াই চাই এত্তো বড়,
সরষের তেল চাই এক চৌবাচ্চা!! আমি গরীব মানুষ,এত সব কোথায় পাব বাবা?

ছেলে মুখ গোঁজ করে রইল।  অগত্যা মা বললে, আচ্ছা আমি এদিকে সব যোগাড়
দেখি গে। তুমি শিকারী বাড়ি গিয়ে বাঘের খোঁজ-খবর কর। 


ছেলেটা নাচতে নাচতে শিকারী বাড়ি  গেল। 

শিকারী সব শুনে হো-হো করে হাসতে লেগেছে, তখন শিকারীর মা এসে তাকে খুব
ধমক দিয়ে ছেলেটাকে ঘরের ভিতরে দেকে নিয়ে গিয়ে বললে, তুমি এতটুকুন ছেলে,

তুমি কি আর এতবড় বাঘ খেতে পার বাবা!! তোমার জন্য আমি একটা কচি বাঘ 
ভেজে দিচ্ছি, খুশিমতন খাও। 

এই বলে ক্ষীর ছানা এলাচ কপ্পুর দিয়ে একটি ছোট্ট বাঘ গড়ে , সেইটি ভেজে 
খোকাকে খেতে দিয়েছে। 

এদিকে হয়েছে কি.....শিকারী ঘরের পাশে এক সুড়ঙ্গের মধ্যে থাকত এক বাঘিনী 
আর তার বাচ্চা। ছেলেটা যেই পা খেয়েছে, অমনি বাঘের বাচ্চাটা বাচ্চাটা মা কে 
বলছে,মা, পা গেল, পা গেল। বাঘিনী দেখছে ,তাই তো !!

এমনি করতে করতে ছেলেটা যেই মাথা খেতে হাঁ করেছে, তখন বাঘিনী দেখলে, সব
তো যায়!!বাঘিনী এক লাফ দিয়ে পড়েছে ছেলেটার সামনে, -- দোহাই বাবা ছেড়ে দে। 



তখন ছেলেটা বললে, রোজ রাতে যদি আমাদের বাড়ি পাহাড়া দাও, আর যে চোর 
আমাদের সব চুরি করে নিয়ে গেছে, তার ঠ্যাংটি খোঁড়া করে দাও, আর বন থেকে মাযের 

রান্নার কাঠকুটো বয়ে এনে দাও, তাহলে ছাড়ব,  নাহলে নয়। 

বাঘিনী বললে, সব করব বাবা, সব করব। 

ছেলেটা তখন বাঘের মুড়ো বাঘকে ফিরিয়ে দিয়ে দিলে, আর বাঘিনীর পিঠে চড়ে বাড়ি 
এসে বললে , মা , মা, দেখে যাও!!

সেই থেকে সবাই তাকে বাঘা  বলে ডাকত।
 
--গৌরী ধর্মপাল--