Bengali Poem লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Bengali Poem লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২২ ডিসে, ২০১৬

দামোদর শেঠ

(This illustration is copyright of Sweta Roy Choudhury©swetaroychoudhury@gmail.com.
                                                                All rights reserved.)
অল্পেতে খুশি হবে দামোদর শেঠ কি?
মুড়কির মোয়া চাই চাই ভাজা ভেটকি।
আনবে কটকি জুতো, মটকিতে ঘি এনো,
জলপাইগুড়ি থেকে এনো কই জিয়োনো।
চাঁদনিতে পাওয়া যাবে বোয়ালের পেট কি?

চিনেবাজারের থেকে এনো তো করমচা,
কাঁকড়ার ডিম চাই, চাই যে গরম চা।
নাহয় খরচা হবে, মাথা হবে হেঁট কি?

মনে রেখো বড় মাপে করা চাই আয়োজন,
কলেবর খাটো নয়, তিন মণ প্রায় ওজন।
খোঁজ নিয়ো ঝরিয়াতে জিলিপির রেট কী।।


--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--


২১ মে, ২০১৬

সহজ পাঠ থেকে...

 
 
সেদিন ভোরে দেখি উঠে
বৃষ্টি বাদল গেছে ছুটে,
রোদ উঠেছে ঝিলমিলিয়ে
বাঁশের ডালে ডালে।
ছুটির দিনে কেমন সুরে
পুজোর সানাই বাজায় দূরে,
তিনটে শালিখ ঝগড়া করে
রান্নাঘরের চালে।
শীতের বেলায় দুই পহরে
দূরে কাদের ছাদের প'রে
ছোট্ট মেয়ে রোদ্‌দুরে দেয়
বেগ্‌নি রঙের শাড়ি।
চেয়ে চেয়ে চুপ করে রই--
তেপান্তরের পার বুঝি ওই,
মনে ভাবি ওইখানেতেই
আছে রাজার বাড়ি।
থাকত যদি মেঘে -ওড়া
পক্ষীরাজের বাচ্ছা ঘোড়া
তক্ষনি যে যেতেম তারে
লাগাম দিয়ে ক'ষে;
যেতে যেতে নদীর তীরে
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমিরে
পথ শুধিয়ে নিতেম আমি
গাছের তলায় ব'সে।।
 
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--
 
 

হাট

 
 
 
কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি
বোঝাই করা কলশি-হাঁড়ি.
গাড়ি চালায় বংশীবদন,
 সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন।
হাট বসেছে শুক্রবারে
বক্‌শিগঞ্জে পদ্মাপারে।
  জিনিসপত্র জুটিয়ে এনে
  গ্রামের মানুষ বেচে কেনে।
উচ্ছে বেগুন পটল মুলো,
বেতের বোনা ধামা কুলো,
সর্ষে ছোলা ময়দা আটা,
   শীতের র‍্যাপার নকশা কাটা,
ঝাঁঝরি কড়া বেড়ি হাতা,
শহর থেকে সস্তা ছাতা।
  কলশি ভরা এখো গুড়ে
  মাছি যত বেড়ায় উড়ে।
খড়ের  আঁটি নৌকো বেয়ে
আনল ঘাটে চাষির মেয়ে।
  অন্ধ কানাই পথের 'পরে
  গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে।
পাড়ার ছেলে স্নানের ঘাটে
জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে।।
 
 --রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--

 
 

১১ ফেব, ২০১৬

ঘুঘু

ঘুঘু পাখি ঘুঘু পাখি 
কি করুন সুরে 
সারাদিন বনে বনে
ডাক ঘুরে ঘুরে !
মাঠে মাঠে গোঠে বাটে 
উড়ে উড়ে যাও,
কান্নার সুর তুলে 
কি তুমি শুধাও?

৮ ফেব, ২০১৬

লিচু-চোর

বাবুদের তালপুকুরে 
হাবুদের ডালকুকুরে 
সেকি বাস করলে তাড়া 
বলি থাম, একটু দাড়া। 

পুকুরের ঐ কাছে না 
লিচু এক গাছ আছে না 
হঠা না আস্তে গিয়ে 
য়্যাব্বড় এক কাস্তে নিয়ে।

গাছে গিয়ে যেই চড়েছি 
ছোট এক ডাল  ধরেছি,
ও বাবা মড়াত করে 
পড়েছি সরত জোরে।

পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই ,
যে ছিল গাছের আড়েই। 
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার 

দিলে খুব কিল ও ঘুষি 
একদম জোরসে ঠুসি। 
আমিও বাগিয়ে থাপড় 
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড় 

লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল 
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
ও বাবা শেয়াল কোথা !
ভুলোটা দাড়িয়ে হোথা

দেখে যেই আতকে ওঠা 
কুকুরও জারলে ছোটা!
আমি কই  কম্ম কাবার 
কুকুরেই করবে সাবাড় 

বাবা গো , মা গো  বলে 
পাঁচিলের ফোকল গলে 
ঢুকি গিয়ে বোসেদের  ঘরে 
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে। 

যাব আর? কান মলি ভাই!
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা,
কুকুরের চামড়া খিঁচা !

সেকি ভাই যায় রে ভুলা!
মালির ঐ  পিটুনিগুলা!
কি বলিস? ফের হপ্তা!
তৌবা নাক খপ্তা।...

--কাজী নজরুল ইসলাম--


৫ ফেব, ২০১৬

আমাদের গ্রাম


আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে, নাহি কেহ পর। 
পাড়ার সকল ছেলে মোরা  ভাইভাই,
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই। 
হিংসা ও মারামারি কভু নাহি করি,
পিতামাতা গুরুজনে সদা মোরা ডরি। 
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচায়েছে প্রাণ। 
মাঠ ভরা ধান আর জল ভরা দিঘী ,
চাঁদের  কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি। 
আম গাছ ,জাম গাছ , বাঁশঝাড়  যেন,
মিলে  মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন। 
সকালে সোনার রবি পূব দিকে ওঠে ,
পাখি ডাকে , বায়ু বয় ,নানা ফুল ফোটে। 

 --বন্দে আলি মিঞা --

২ ফেব, ২০১৬

হাসিখুশি থেকে .... (৩)

- কাকাতুয়ার মাথায় ঝুঁটি 
- খ্যাঁকশিয়ালি পালায় ছুটি 
- গরু বাছুর দাড়িয়ে আছে 
- ঘুঘুপাখি ডাকছে গাছে 
- ঙ নৌকা মাঝি ব্যাঙ 
- চিতা বাঘের সরু ঠ্যাং 
- ছাগলছানা লাফিয়ে চলে 
- জাহাজ ভাসে সাগর জলে 

- ঝাড়ু  হাতে এল  কানাই 
- ঞ চড়ে নাচছে দুভাই  
- টিয়া পাখির ঠোঁটটি লাল 
- ঠাকুরদাদার শুকনো গাল 
- ডুলি কাঁধে বেহারা যায় 
- ঢুলিভায়া ঢোলক বাজায়
- [মূর্ধন্য]ণ নাকের 'পরে 
- তিমি আপন শিকার ধরে 
- থালা ভরা আছে মিঠাই 
- দোয়াত আছে কালি নাই 
- ধোপা কেমন কাপড় কাচে 
- নাপিতভায়া দাড়ি চাঁচে 
- পাখির বাসা হাওয়ায় নড়ে 
- ফোয়ারা হতে জল পড়ে 
- বুলবুলিটির মুখটি কালো 
- ভালুক জানে বাসতে ভালো 
- ময়ূর নাচে পেখম ধরে 
-  যাতা ঘোরে হাতের জোরে
- রাজহাঁসটির  গলা সরু 
- লাঠির চোটে পালায় গরু 
- বাঘের যত সাহস চোখে 
- শকুন কাঁদে গরুর শোকে 
- ষাঁড় ছুটেছে পুকুরপাড়ে 
- সিংহ রাগে কেশর নাড়ে 
- হাসি মুখটি দেখতে বেশ 
- ড়-এর দফা হলো শেষ 
ঢ়-এর মাথা কামড়ে খায়
- [খণ্ড-ত]ৎ ঐ পুষির গায়
- য় ছিল তাই  গেল বেঁচে 

- [অনুস্বার] ং-টি হারিয়ে গেছে 
- [বিসর্গ] ঃ-এর ভুঁড় পেট 

- [চন্দ্রবিন্দু] ঁ-র মাথা হেঁট 



--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --


১ ফেব, ২০১৬

দশটি ছেলে

হারাধনের দশটি ছেলে 
ঘোরে পাড়াময় ,
একটি কোথা হারিয়ে গেল 
রইল  বাকি নয়। 

হারাধনের নয়টি ছেলে 
কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দুখান হল 
রইল  বাকি আট। 

হারাধনের আটটি ছেলে 
বসল খেতে ভাত ,
একটির পেট ফেটে গেল 
রইল বাকি সাত। 

হারাধনের সাতটি ছেলে 
গেল জলাশয় ,
একটি সেথা ডুবে ম'ল 
রইল বাকি ছয়। 

হারাধনের ছয়টি ছেলে
চড়তে গেল গাছ ,
একটি ম'ল পিছলে পড়ে 
রইল বাকি পাঁচ। 

হারাধনের পাঁচটি ছেলে 
গেল বনের ধার,
একটি গেল বাঘের পেটে 
রইল বাকি চার। 

হারাধনের চারটি ছেলে 
নাচে ধিন ধিন,
একটি ম'ল আছাড়  খেয়ে 
রইল  বাকি তিন। 

হারাধনের তিনটি ছেলে 
ধরতে গেল রুই,
একটি খেল বোয়াল মাছে 
রইল বাকি দুই। 

হারাধনের দুইটি ছেলে 
মারতে গেল ভেক ,
একটি ম'ল সাপের বিষে 
রইল বাকি এক। 

হারাধনের একটি ছেলে 
কাঁদে ভেউ ভেউ ,
মনের দুঃখে বনে গেল 
রইল না আর কেউ। 

--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --

হাসি-খুশি থেকে .... (2)

 
কাক ডাকে কা কা,
আগে অ, পরে আ। 


খোকা হাসে হি হি,
[হ্রস্ব] ই , [দীর্ঘ] ঈ। 
 

ঘুঘু করে ঘু ঘু ,
[হ্রস্ব] উ  , [দীর্ঘ] ঊ। 
 

রুই কাতলা  জোড়া কৈ,
ঋ ঌ এ ঐ। 
 

ভুলো ডাকে ভৌ  ভৌ,
বাকি শুধু  ও ঔ। 


-- যোগীন্দ্রনাথ সরকার --

মোরগ ও মুরগি

 
 
মোরগ মোরগ মোরগ-টি
মাথার পরে লাল ঝুঁটি,
উচ্চে তুলে পুচ্ছ তার
করছে দেখো কি চিৎকার!
বাচ্চা নিয়ে মুরগি-টি
ওই যে কণা খায় খুঁটি,
হেথায় হোথায় ডিম পাড়ে
কোঁকর কোঁকর ডাক ছাড়ে।। 

কাক

 
কুচকুচে কালো রঙ
কর্কশ ডাক,
সারাদিন দুষ্টুমি
দজ্জাল কাক।
পেটুকের শিরোমণি
দিনভর চুরি,
উঁকিঝুঁকি ঘরে-ঘরে
শুধু ঘোরাঘুরি।
খাবার দেখলে পরে
মিটিমিটি চায়,
ফাঁক পেলে ঠোঁটে নিয়ে
তখুনি পালায়।।

 

কোকিল

 
কুহু কুহু কোকিল ডাকে
আমগাছের ফাঁকে ফাঁকে।
মুকুল এল ফাগুন মাসে,
খবর পেয়ে কোকিল আসে।
কাকের বাসায় ডিম পেড়ে,
কোকিল পালায় দেশ ছেড়ে।
কাকে পোষে কোকিল ছানা,
এই কথাটি সবার জানা।


৩০ জানু, ২০১৬

খিচুড়ি

হাঁস ছিল, সজারুও, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে "বাহবা কি ফূর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।" 
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা-
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে; ধড়ে মুড়ো সন্ধি!
জিরাফের সাধ নাই মাঠে-ঘাটে ঘুরিতে,
ফড়িং-এর ঢং ধরি সেও চায় উড়িতে।
গরু বলে, "আমারেও ধরিল কি ও রোগে?
মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে?"
'হাতিমির দশা দেখ- তিমি ভাবে জলে যাই,
হাতি বলে, "এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই।"
সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট-
হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট। 

আকাশের গায়ে

 

আকাশের গায়ে কিবা রামধনু খেলে,
দেখে চেয়ে কত লোক সব কাজ ফেলে;
তাই দেখে খুঁৎ-ধরা বুড়ো কয় চটে,
দেখছ কি এই রঙ পাকা নয় মোটে।।
 
--সুকুমার রায়--

২৯ জানু, ২০১৬

বলব কি ভাই


 
বলব কি ভাই হুগলি গেলুম
বলছি তোমায় চুপি-চুপি-
দেখতে পেলাম তিনটে শুয়োর
মাথায় তাদের নেইকো টুপি।।
 
--সুকুমার রায়--


আড়ি

 
 
কিসে কিসে ভাব নেই? ভক্ষক ও ভক্ষ্যে-
বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে।
 
শেয়ালের সাড়া পেলে  কুকুরেরা তৈরি,
সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরি!
 
আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনোদিন সে?
কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয়।
 
তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা দেখনি?
ছ্যাঁক ছ্যাঁক রাগ যেন খেতে আসে এখনি।
 
তার চেয়ে বেশি আড়ি আমি পারি কহিতে-
তোমাদের কারো কারো কেতাবের সহিতে।
 
 
--সুকুমার রায়--