৩০ জানু, ২০১৬

খিচুড়ি

হাঁস ছিল, সজারুও, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে "বাহবা কি ফূর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।" 
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা-
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে; ধড়ে মুড়ো সন্ধি!
জিরাফের সাধ নাই মাঠে-ঘাটে ঘুরিতে,
ফড়িং-এর ঢং ধরি সেও চায় উড়িতে।
গরু বলে, "আমারেও ধরিল কি ও রোগে?
মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে?"
'হাতিমির দশা দেখ- তিমি ভাবে জলে যাই,
হাতি বলে, "এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই।"
সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট-
হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট। 

আকাশের গায়ে

 

আকাশের গায়ে কিবা রামধনু খেলে,
দেখে চেয়ে কত লোক সব কাজ ফেলে;
তাই দেখে খুঁৎ-ধরা বুড়ো কয় চটে,
দেখছ কি এই রঙ পাকা নয় মোটে।।
 
--সুকুমার রায়--

২৯ জানু, ২০১৬

বলব কি ভাই


 
বলব কি ভাই হুগলি গেলুম
বলছি তোমায় চুপি-চুপি-
দেখতে পেলাম তিনটে শুয়োর
মাথায় তাদের নেইকো টুপি।।
 
--সুকুমার রায়--


আড়ি

 
 
কিসে কিসে ভাব নেই? ভক্ষক ও ভক্ষ্যে-
বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে।
 
শেয়ালের সাড়া পেলে  কুকুরেরা তৈরি,
সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরি!
 
আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনোদিন সে?
কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয়।
 
তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা দেখনি?
ছ্যাঁক ছ্যাঁক রাগ যেন খেতে আসে এখনি।
 
তার চেয়ে বেশি আড়ি আমি পারি কহিতে-
তোমাদের কারো কারো কেতাবের সহিতে।
 
 
--সুকুমার রায়--

বাবুরাম সাপুড়ে

                                          


বাবুরাম সাপুড়ে
কোথা যাস বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা,
দুটো সাপ রেখে যা!
যে সাপের চোখ নেই,
শিং নেই নখ নেই,
ছোটে না কি হাঁটে না,
কাউকে যে কাটে না,
করে নাকো ফোঁস ফাঁস,
মারে নাকো ঢুঁসঢাঁস,
নেই কোনো উৎপাত,
খায় শুধু দুধভাত,
সেই সাপ জ্যান্ত
গোটা দুই আন তো,
তেড়ে মেড়ে ডাণ্ডা
করে দিই ঠাণ্ডা।।
 
 --সুকুমার রায়--
 

২১ জানু, ২০১৬

আবোল -তাবোল

মেঘ্মুলুকে ঝাপসা রাতে,                                                      
রামধনুকের আবছায়াতে,                                                     
তাল বেতালে খেয়াল সুরে,                                                   
তান ধরেছি কন্ঠপুরে।                                                          
হেথায় নিষেধ নাইরে দাদা,                                                   
নাই রে বাঁধন  নাইরে বাধা।                                                  
হেথায় রঙিন আকাশ তলে                                                  
স্বপন দোলা হাওয়ায় দোলে                                                    
সুরের নেশায় ঝরনা ছোটে,                                                   
আকাশ কুসুম আপনি ফোটে                                                
রাঙিয়ে আকাশ, রাঙিয়ে মন                                                 
চমক জাগে ক্ষণে ক্ষণ।                                                           
আজকে দাদা যাওয়ার আগে                                                 
বলব যা মোর চিত্তে লাগে                                                     
নাই বা তাহার অর্থ হোক                                                    
নাই বা বুঝুক বেবাক লোক                                               
আপনাকে আজ আপন হতে       
ভাসিয়ে দিলাম খেয়াল স্রোতে।                                                           
ছুটলে কথা থামায় কে?
আজকে ঠেকায় আমায় কে?
আজকে আমার মনের মাঝে 
ধাইধপাধপ তবলা বাজে-
রাম খটাখট ঘ্যাঁচাঙঘ্যাচ
কথায় কাটে কথার প্যাঁচ। 
আলোয় ঢাকা অন্ধকার ,
ঘন্টা বাজে গন্ধে  তার। 
হ্যাঙলা হাতি চ্যাংদোলা 
শুন্যে তাদের ঠ্যাং তোলা। 
মক্ষীরানী পক্ষীরাজ 
দস্যি ছেলে লক্ষী আজ।  
আদিম কালের চাদিম হিম,
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম। 
ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর 
গানের পালা সাঙ্গ মোর। 

 -সুকুমার রায় -

১২ জানু, ২০১৬

সাপ নয়তো - যম !

সাপ নয়তো - যম!
টবটা দিয়ে চাপা দিয়ে,
ফাটিয়ে দেব দম!

যেমন তুমি খল ,
কারাগরের অন্ধকারে 
ভোগ প্রতিফল !

বাহবা কি মজা!
সিংহাসনে বসে আছি 
কিস্কিন্দার রাজা!

উঃ !! জ্বলে মলুম বাপ!
ল্যাজের গোড়ায় ছুবলেছে 
হতভাগা সাপ!

প্রাণটা  বুঝি যায়!
লেজটা ফুলে কলাগাছ 
করি কি উপায় !

মুখ থুবড়ে পড়ি বুঝি 
হায় হায় হায়!!

১১ জানু, ২০১৬

নীলকন্ঠ

 
নীলকন্ঠ নীলকন্ঠ নীলে মাখামাখি 
চুপটি করে বসে কেন গাছের ডালে পাখি?
নীল বরণ দেহ তোমার, রূপটি মনোহর 
এস পাখি মোদের গাঁয়ে দেব সোনার ঘর।  

পায়রা


 
 বকবক দিনরাত পায়রার দল 
ঘরেদোরে ঘুরেফিরে বড় চঞ্চল।
কত দূর দেশে ওরা উড়ে-উড়ে যায় 
ফিরে আসে পথ চিনে আপন বাসায়

২ জানু, ২০১৬

ফড়িং বাবুর বিয়ে


ফড়িং বাবুর বিয়ে 
টিকটিকিতে ঢোলক বাজায় 
ধুনচি মাথায় দিয়ে। 
বেহারা হল  তেলাপোকা 
পালকি কাঁধে নিয়ে। 
দেখতে এলো সেজেগুজে 
পিপড়ে মায়ঝিয়ে
আরে ফড়িং বাবুর বিয়ে। 

ঘাসের পাতা লুচি হল 
ভাজা শিশির ঘিয়ে। 
দই সন্দেশ তৈরি হল 
মাটিতে জল দিয়ে।
ব্যাঙের ছাতার নিচে সবে 
খেতে বসল  গিয়ে 
আরে ফড়িং বাবুর বিয়ে। 

মিঠির চিঠি


"তোমরা নাকি দাঁত মাজনা?"
এই না বলে মিঠি
সবুজ বনের হাতির কাছে
পাঠিয়ে দিলে চিঠি। 
উত্তরে তার লিখল হাতি,
"মিঠি প্রিয়ভাজন,
কি করি ভাই -
কেউ আমাদের 
দেয় না কিনে মাজন।"  


১ জানু, ২০১৬

ডলি

[bewildered.jpg]

ডলি ডলি ডলি,
একটি মেয়ের কথাই বলি। 
এক পকেটে পুতুল ,
আর পকেটে তেঁতুল ।
তেঁতুল ভেবে পুতুল খেয়ে 
মুখ ভর্তি তুলো। 
ডলি একটুখানি ভুলো।