৮ ফেব, ২০১৬

বাঘা

 
একটা ছেলে ছিল। 
সেই ছেলেটা একদিন ভাত খেতে বসে মা কে বললে , মা আমি বাঘ ভাজা খাব। 
মা বললে, বাঘ ভাজা খেতে হলে উনুন চাই এত্তো খানি, কড়াই চাই এত্তো বড়,
সরষের তেল চাই এক চৌবাচ্চা!! আমি গরীব মানুষ,এত সব কোথায় পাব বাবা?

ছেলে মুখ গোঁজ করে রইল।  অগত্যা মা বললে, আচ্ছা আমি এদিকে সব যোগাড়
দেখি গে। তুমি শিকারী বাড়ি গিয়ে বাঘের খোঁজ-খবর কর। 


ছেলেটা নাচতে নাচতে শিকারী বাড়ি  গেল। 

শিকারী সব শুনে হো-হো করে হাসতে লেগেছে, তখন শিকারীর মা এসে তাকে খুব
ধমক দিয়ে ছেলেটাকে ঘরের ভিতরে দেকে নিয়ে গিয়ে বললে, তুমি এতটুকুন ছেলে,

তুমি কি আর এতবড় বাঘ খেতে পার বাবা!! তোমার জন্য আমি একটা কচি বাঘ 
ভেজে দিচ্ছি, খুশিমতন খাও। 

এই বলে ক্ষীর ছানা এলাচ কপ্পুর দিয়ে একটি ছোট্ট বাঘ গড়ে , সেইটি ভেজে 
খোকাকে খেতে দিয়েছে। 

এদিকে হয়েছে কি.....শিকারী ঘরের পাশে এক সুড়ঙ্গের মধ্যে থাকত এক বাঘিনী 
আর তার বাচ্চা। ছেলেটা যেই পা খেয়েছে, অমনি বাঘের বাচ্চাটা বাচ্চাটা মা কে 
বলছে,মা, পা গেল, পা গেল। বাঘিনী দেখছে ,তাই তো !!

এমনি করতে করতে ছেলেটা যেই মাথা খেতে হাঁ করেছে, তখন বাঘিনী দেখলে, সব
তো যায়!!বাঘিনী এক লাফ দিয়ে পড়েছে ছেলেটার সামনে, -- দোহাই বাবা ছেড়ে দে। 



তখন ছেলেটা বললে, রোজ রাতে যদি আমাদের বাড়ি পাহাড়া দাও, আর যে চোর 
আমাদের সব চুরি করে নিয়ে গেছে, তার ঠ্যাংটি খোঁড়া করে দাও, আর বন থেকে মাযের 

রান্নার কাঠকুটো বয়ে এনে দাও, তাহলে ছাড়ব,  নাহলে নয়। 

বাঘিনী বললে, সব করব বাবা, সব করব। 

ছেলেটা তখন বাঘের মুড়ো বাঘকে ফিরিয়ে দিয়ে দিলে, আর বাঘিনীর পিঠে চড়ে বাড়ি 
এসে বললে , মা , মা, দেখে যাও!!

সেই থেকে সবাই তাকে বাঘা  বলে ডাকত।
 
--গৌরী ধর্মপাল--

৬ ফেব, ২০১৬

টুনটুনি আর দুষ্টু বিড়াল

 
                                                   

গৃহস্থদের ঘরের পিছনে বেগুন গাছ আছে। সেই বেগুন গাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে টুনটুনি পাখিটি তার বাসা বেঁধেছে।
বাসার ভিতরে তিনটি ছোট্ট-ছোট্ট ছানা হয়েছে। খুব ছোট্ট ছানা, তারা উড়তে পারে না, চোখও মেলতে পারে না। খালি হাঁ করে চিঁ চিঁ করে।
গৃহস্থদের বিড়ালটা ভারি দুষ্টু। সে খালি ভাবে "টুনটুনির ছানা খাব।" একদিন সে বেগুন গাছের তলায় এসে বলল, "কী করছিস লা টুনটুনি?"
টুনটুনি তার মাথা হেঁট করে বেগুন গাছের ডালে ঠেকিয়ে বলল, প্রণাম হই, মহারানি!"
তাতে বিড়ালনি ভারি খুশি হয়ে চলে গেল।
এমনি সে রোজ আসে, রোজ টুনটুনি তাকে প্রণাম করে আর মহারানি বলে, আর সে খুশি হয়ে চলে যায়।
এখন টুনটুনির ছানাগুলি বড় হয়েছে, তাদের সুন্দর পাখা হয়েছে। তারা আর চোখ বুজে থাকে না। তা দেখে টুনটুনি তাদের বলল, "বাছা, তোরা উড়তে পারবি?"
ছানারা বলল, "হ্যাঁ  মা, পারব।"
টুনটুনি বলল, "তবে দেখ তো দেখি, ওই  তালগাছটার ডালে গিয়ে বসতে পারিস কিনা।"
ছানারা তখনই উড়ে গিয়ে তাল গাছের ডালে বসল। তা দেখে টুনটুনি হেসে বলল, "এখন দুষ্টু বিড়াল আসুক দেখি!"
খানিক বাদেই বিড়াল  এসে বলল, "কী করছিস লা টুনটুনি?"
তখন টুনটুনি পা উঠিয়ে তাকে লাথি দেখিয়ে বলল, "দূর হ, লক্ষ্মীছাড়ি বিড়ালনি!" বলেই সে ফুড়ুৎ করে উড়ে পালাল।
 
দুষ্টু বিড়াল দাঁত খিঁচিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠে, টুনটুনিকেও ধরতে পারল না, ছানাও খেতে পেল না। খালি বেগুন কাঁটার খোঁচা খেয়ে নাকাল হয়ে ঘরে ফিরল।

--উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী--


৫ ফেব, ২০১৬

আমাদের গ্রাম


আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে, নাহি কেহ পর। 
পাড়ার সকল ছেলে মোরা  ভাইভাই,
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই। 
হিংসা ও মারামারি কভু নাহি করি,
পিতামাতা গুরুজনে সদা মোরা ডরি। 
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচায়েছে প্রাণ। 
মাঠ ভরা ধান আর জল ভরা দিঘী ,
চাঁদের  কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি। 
আম গাছ ,জাম গাছ , বাঁশঝাড়  যেন,
মিলে  মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন। 
সকালে সোনার রবি পূব দিকে ওঠে ,
পাখি ডাকে , বায়ু বয় ,নানা ফুল ফোটে। 

 --বন্দে আলি মিঞা --

৪ ফেব, ২০১৬

ছিটে-ফোঁটা

 
উঠোন-কোণে কড়াই ছিল,
পায়েস ছিল তাতে,
তাই নিয়ে কাক লড়াই করে কুঁকড়ো বুড়োর সাথে।
যুদ্ধ জিতে বড়াই ভারি,
তখন দেখে চেয়ে--
কখন এসে চড়াই পাখি,
পায়েস গেছে খেয়ে।।
 
--সুকুমার রায়--

৩ ফেব, ২০১৬

টিক্‌-টিক্‌-টিক্‌

 
টিক্‌-টিক্‌ চলে ঘড়ি টিক্‌-টিক্‌-টিক্‌
একটা ইঁদুর এল সে সময়ে ঠিক!
 
ঘড়ি দেখে এক লাফে তাহাতে চড়িল,
টং করে অমনি ঘড়ি বাজিয়া উঠিল।
 
অমনি ইঁদুর ভায়া লেজ গুটাইয়া,
ঘড়ির উপর থেকে পড়ে লাফাইয়া!
 
ছুটিয়া পলায়ে গেল, আর না আসিল,
টিক্‌-টিক্‌-টিক্‌ ঘড়ি চলিতে লাগিল।
 
--সুকুমার রায়--

২ ফেব, ২০১৬

হাসিখুশি থেকে .... (৩)

- কাকাতুয়ার মাথায় ঝুঁটি 
- খ্যাঁকশিয়ালি পালায় ছুটি 
- গরু বাছুর দাড়িয়ে আছে 
- ঘুঘুপাখি ডাকছে গাছে 
- ঙ নৌকা মাঝি ব্যাঙ 
- চিতা বাঘের সরু ঠ্যাং 
- ছাগলছানা লাফিয়ে চলে 
- জাহাজ ভাসে সাগর জলে 

- ঝাড়ু  হাতে এল  কানাই 
- ঞ চড়ে নাচছে দুভাই  
- টিয়া পাখির ঠোঁটটি লাল 
- ঠাকুরদাদার শুকনো গাল 
- ডুলি কাঁধে বেহারা যায় 
- ঢুলিভায়া ঢোলক বাজায়
- [মূর্ধন্য]ণ নাকের 'পরে 
- তিমি আপন শিকার ধরে 
- থালা ভরা আছে মিঠাই 
- দোয়াত আছে কালি নাই 
- ধোপা কেমন কাপড় কাচে 
- নাপিতভায়া দাড়ি চাঁচে 
- পাখির বাসা হাওয়ায় নড়ে 
- ফোয়ারা হতে জল পড়ে 
- বুলবুলিটির মুখটি কালো 
- ভালুক জানে বাসতে ভালো 
- ময়ূর নাচে পেখম ধরে 
-  যাতা ঘোরে হাতের জোরে
- রাজহাঁসটির  গলা সরু 
- লাঠির চোটে পালায় গরু 
- বাঘের যত সাহস চোখে 
- শকুন কাঁদে গরুর শোকে 
- ষাঁড় ছুটেছে পুকুরপাড়ে 
- সিংহ রাগে কেশর নাড়ে 
- হাসি মুখটি দেখতে বেশ 
- ড়-এর দফা হলো শেষ 
ঢ়-এর মাথা কামড়ে খায়
- [খণ্ড-ত]ৎ ঐ পুষির গায়
- য় ছিল তাই  গেল বেঁচে 

- [অনুস্বার] ং-টি হারিয়ে গেছে 
- [বিসর্গ] ঃ-এর ভুঁড় পেট 

- [চন্দ্রবিন্দু] ঁ-র মাথা হেঁট 



--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --


মামার বাড়ি

 
মামাদের দরজায় 
বাঘা থাকে এক;
তেড়ে  নাহি আসে , নাহি 
করে ভেক ভেক। 
 
 
মামাদের পুকুরেতে 
আছে বড় রুই;
পশু আর মাছে মিলে 
একে একে দুই। 
 
মামাদের বাগানেতে 
চরিছে হরিণ ;
দুই পশু এক মাছ-
দুয়ে একে তিন। 

মামাদের রাঙা গরু 
কিবা রূপ তার;
তিন পশু এক মাছ 
তিনে একে চার। 
 
মামাদের  বানরের 
কি মজার নাচ;
চার পশু এক মাছ 
চারে একে পাঁচ। 
 
মামাদের সাদা ভেড়া 
উঠানেতে রয়;
পাঁচ পশু এক মাছ 
পাঁচে একে ছয়। 
 

মামাদের খরগোশ 
চাটে  এসে হাত;
ছয় পশু এক মাছ 
ছয় একে সাত। 
 
মামাদের পোষা মেনি 
যেন বড়লাট;
সাত পশু এক মাছ 
সাতে একে আট। 


মামাদের রাজহাঁস 
পুকুরেতে রয়;
পশু, পাখি, মাছে মিলে 
আটে একে নয়। 
 
মামাদের চাকরের 
হয়েছে বয়স;
সবে তারে ভালবাসে 
নয়ে  একে দশ। 

--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --

১ ফেব, ২০১৬

দশটি ছেলে

হারাধনের দশটি ছেলে 
ঘোরে পাড়াময় ,
একটি কোথা হারিয়ে গেল 
রইল  বাকি নয়। 

হারাধনের নয়টি ছেলে 
কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দুখান হল 
রইল  বাকি আট। 

হারাধনের আটটি ছেলে 
বসল খেতে ভাত ,
একটির পেট ফেটে গেল 
রইল বাকি সাত। 

হারাধনের সাতটি ছেলে 
গেল জলাশয় ,
একটি সেথা ডুবে ম'ল 
রইল বাকি ছয়। 

হারাধনের ছয়টি ছেলে
চড়তে গেল গাছ ,
একটি ম'ল পিছলে পড়ে 
রইল বাকি পাঁচ। 

হারাধনের পাঁচটি ছেলে 
গেল বনের ধার,
একটি গেল বাঘের পেটে 
রইল বাকি চার। 

হারাধনের চারটি ছেলে 
নাচে ধিন ধিন,
একটি ম'ল আছাড়  খেয়ে 
রইল  বাকি তিন। 

হারাধনের তিনটি ছেলে 
ধরতে গেল রুই,
একটি খেল বোয়াল মাছে 
রইল বাকি দুই। 

হারাধনের দুইটি ছেলে 
মারতে গেল ভেক ,
একটি ম'ল সাপের বিষে 
রইল বাকি এক। 

হারাধনের একটি ছেলে 
কাঁদে ভেউ ভেউ ,
মনের দুঃখে বনে গেল 
রইল না আর কেউ। 

--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --

হাসি-খুশি থেকে .... (2)

 
কাক ডাকে কা কা,
আগে অ, পরে আ। 


খোকা হাসে হি হি,
[হ্রস্ব] ই , [দীর্ঘ] ঈ। 
 

ঘুঘু করে ঘু ঘু ,
[হ্রস্ব] উ  , [দীর্ঘ] ঊ। 
 

রুই কাতলা  জোড়া কৈ,
ঋ ঌ এ ঐ। 
 

ভুলো ডাকে ভৌ  ভৌ,
বাকি শুধু  ও ঔ। 


-- যোগীন্দ্রনাথ সরকার --

হাসিখুশি থেকে ....

- অজগর আসছে তেড়ে 
- আমটি আমি খাব পেড়ে 
-  ইঁদুরছানা ভয়ে মরে 
 - ঈগল পাখি পাছে ধরে 
- উট চলেছে মুখটি তুলে 
- [দীর্ঘ ] ঊ -টি আছে ঝুলে 
- ঋষি মশাই বসেন পূজায় 
- ঌ -কার যেন ডিগবাজি খায় 
- এক্কা গাড়ি খুব ছুটেছে
- ঐ দেখ ভাই চাঁদ উঠেছে 
- ওল খেয়ো না ধরবে গলা 
- ঔষধ খেতে মিছে বলা 

--যোগীন্দ্রনাথ সরকার --