পাহাড় ঘেঁষে সরল গাছের বন। সেই বনের ধারে ফুলকো ঘাসের ঝোপে থাকে এক কচি হরিণ আর তার মা-বাবা।
মার কোল ঘেঁষে বসে কচি দূরের পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে আর বলে , আমরা কবে পাহাড়ে যাব মা ?
মা বলে , একটু বড় হ, পায়ে জোর হোক, দম বাড়ুক , বুদ্ধি পাকুক, তবে তো ?
একদিন কচির বাবা দূরের ঘাসবনে চড়তে গেছে , কচি মার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে একটু করে ঘাস খাচ্ছে আর একটু করে পোকামাকড় মাটি গাছপালা এসব চিনছে , এমন সময় মা হঠাত্ খাওয়া থামিয়ে কান খাড়া করে ফিসফিসিয়ে বললে, শুনতে পাচ্ছিস ?
কচি সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় সোজা কান খাড়া করে বললে, হ্যা মা, পাচ্ছি। কিসের শব্দ মা ?
মা বললে , এক্ষুনি দেখতে পাবি। তার আগে আয় লুকোই। একটু পরেই গো -গো করতে করতে আট-দশখানা মাল-বোঝাই মানুষ-বোঝাই জিপগাড়ি ধুলো উড়িয়ে পাহাড়ের দিকে চলে গেল।
কচি বললে , ওরা কোথায়ে যাচ্ছে মা ?
মা বললে, ওরা পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে কচি 'আমিও পাহাড়ে যাব মা ' বলে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসে গাড়ির পেছন পেছন ছুটতে আরম্ভ করলে। মা অনেক ছুটেও কচিকে ধরতে পারলে না। কচি লাফ দিয়ে পিছনের গাড়িটায় উঠে পড়ল।
গাড়ির লোকেরা তো কচির কান্ড দেখে অবাক। কচিকে নিয়ে তারা কী করবে ভাবছে, এমন সময় কচির মাকে পাগলের মত ছুটে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি গাড়ি থামিয়ে তারা কচিকে পাঁজাকোলা করে ধরে নামিয়ে দিল। কচি খুব পা ছুড়তে লাগল , কিছুতেই নামবে না। শেষকালে একজন বন্দুক তুলে যেই না গুরুম করে আওয়াজ করেছে, অমনি কচি ভয় পেয়ে তড়াক করে লাফিয়ে পড়ে পো পা দৌড়।
বিকেলবেলা বাবা এসে সব শুনে-টুনে বললে,
সাহস তো তোর্ ভালই দেখছি,
দৌড়সও তো ভালই।
সঙ্গে একটু বুদ্ধি জুড়লে
ফলটা হবে আরোই।
কাল থেকে চল আমার সঙ্গে
যাবি দূরের বনে।
একে একে সাধ মেটাব
যা আছে তোর মনে।
পুতুপুতু করব না আর,
আর না দুরুদুরু।
বারদুনিয়ায় কাল থেকে তোর
নতুন জীবন শুরু।
কচি বললে , হ্যা বাবা , মাও যাবে তো ?
বাবা বললে, সে কি রে ?
আমি যাব তুই যাবি মা যাবে না ?
আমি পাব তুই পাবি মা পাবে না ?
মা না হলে ঘুম পেলে কি হবে উপায় ?
শিং দিয়ে চুলকে কে দেবে তর গায়ে ?
ঘাস থেকে কাঁটা বেছে দেবে কে ?
পাতা-গলা ঘোলা জল সেঁচে দেবে কে ?
মা যদি না বুড়ি হয়, বোকারাম ওরে,
তুই-আমি ছুটোছুটি খেলব কি করে ?
কচি তখন 'আমিও তো তাই বলছিলুম ' বলে মার কোলে মুখ লুকালো। আর বাবার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল মা।
-- গৌরী ধর্মপাল --