১৩ ফেব, ২০১৬

দুই শেয়াল

                          

এক বনের মধ্যে পাশাপাশি দুই গর্তে দুই শেয়াল থাকত।  একজনের নাম একশেয়াল , আর একজনের নাম খেঁকশেয়াল। একদিন একশেয়াল খেঁকশেয়ালকে বললে -- দাদা, এ বনের চৌহদ্দি কত, তুমি জানো ?
খেঁকশেয়াল বললে , তা আর জানি না ? তোর পায়ের একশ পা চওড়া  আর আমার পায়ের একশ পা লম্বা -- এই হল এ বনের চৌহদ্দি। এক্কেবার পাক্কা হিসাব।
একশেয়াল বললে, আর বনে কত গুলো গাছ আছে, দাদা, গুনে দেখেছ ?
খেঁকশেয়াল বললে, তা আর গুনি নি ? তাহলে মাঝে মাঝে যে একা-একা ইদিক-বিদিক ঘুরে বেড়াই , সে কিসের জন্যে ?
শোন, তোর্ গায়ে যতগুলো লোম, ততগুলো গাছ।একটা কম না , একটা বেশী না। 
একশেয়াল বললে, দাদা , লোম যদি খসে ?
-- তাহলে বুঝবি, একটা গাছ খসল। 
-- আর লোম যদি গজায় ?
-- তাহলে বুঝবি গাছ গজালো।  এক্কেবারে পাক্কা হিসেব।  এদিক ওদিক হবার যো নেই। 

একদিন একশেয়াল আর খেঁকশেয়াল গর্তে ঘুমিয়ে আছে, আর বনে তো আগুন লেগেছে।  তখন খেঁকশেয়াল তাড়াতাড়ি একশেয়ালকে ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে বলছে , ওরে আগুন আগুন ! পালা পালা পালা। 

বনের গাছপালা পুড়ছে, একশেয়াল  খেঁকশেয়াল দৌড়াচ্ছে, আর থেকে থেকে থমকে থেমে একশেয়াল বলছে, দাদা, একশ ছেড়ে দুশ হল, তিন-চার-পাঁচ-সাতশ হল, বন তো কি ফুরোল না ?  খেঁকশেয়াল বলছে, ফুরোবে বাবা ফুরোবে , তুই দৌড় না।  কুড়োতে কুড়োতে বুড়োয় , দৌড়তে দৌড়তে ফুরোয়। 

একশেয়াল  আবার দৌড়চ্ছে, আবার থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে বলছে --
               বন তো সাবাড় 
               গাছ তো কাবার 
               লোম তো দাদা খসছে না !
               হিসেব তো কই মিলছে না !

তখন খেঁকশেয়ালবললে , ওরে পাগলা , দেখছিস না ,

              জ্বলছে আগুন লকলকিয়ে, হিসেব পুড়ে  ছাই। 
             ভাবনা ছেড়ে দৌড়ে  আগে প্রাণ বাঁচা না ভাই।

তখন একশেয়াল  বললে, সত্যি আমি কি বোকা। 
খেঁকশেয়াল বললে , সে কথা য়্যাদ্দিনে বুঝলি ?
তারপর দুজনে মিলে  দৌড়  দৌড়  দৌড় !

--গৌরী ধর্মপাল--

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন