২৭ মে, ২০১৭

চড়ুই


Image result for sparrow playing in sand clipart

ধুলোর মধ্যে স্নান সেরে নেয় 
ছোট্ট চড়ুই পাখি ,
সারাটা দিন কিচির মিচির ,
শুধুই ডাকাডাকি।
ঘুলঘুলিতে বাসা ওদের ,
সূর্য যখন ডোবে ,
তখন গিয়ে  সেইখানে ও 
মায়ের পাশে শোবে। 

-নীরেন্দ্রনাথ  চক্রবর্তী 

ছড়া

Image result for little girl and little bird clipart
পাখি তুই চলে আয় 
পিপঁড়ের গর্তে 
পাখি বলে,  যেতে পারি 
শুধু এক শর্তে;
রোজ যদি দিতে পারো 
সন্দেশ , দই,
তার সাথে একখানা 
গল্পের বই।  

- প্রীতিভূষণ চাকী 

আমি যদি হতুম

আমি যদি বাবা হতুম,
বাবা হত খোকা
না হলে তার নামতা পড়া 
মারতাম মাথায় টোকা।
রোজ যদি হতো রবিবার 
কি মজাটাই হত  যে আমার।
থাকতো নাকো  নামতা লেখা-জোকা। 
থাকতো নাকো  যুক্তাক্ষর,  অংকে ধরতো পোকা।

- কাজী নজরুল ইসলাম 

খোকার প্রশ্ন

Image result for curious boy clipart
আচ্ছা মাগো, বলো দেখি 
রাত্রি কেন কালো ?
সুয্যিমামা কোথা থেকে 
পেলেন এমন আলো ?
ফুলগুলো সব নানান রঙের 
কেমন করে হয় ?
পাতাগুলো সবুজ কেন 
ফুলের মতো নয় ?

-বিভাবতী সেন 

২২ ডিসে, ২০১৬

দামোদর শেঠ

(This illustration is copyright of Sweta Roy Choudhury©swetaroychoudhury@gmail.com.
                                                                All rights reserved.)
অল্পেতে খুশি হবে দামোদর শেঠ কি?
মুড়কির মোয়া চাই চাই ভাজা ভেটকি।
আনবে কটকি জুতো, মটকিতে ঘি এনো,
জলপাইগুড়ি থেকে এনো কই জিয়োনো।
চাঁদনিতে পাওয়া যাবে বোয়ালের পেট কি?

চিনেবাজারের থেকে এনো তো করমচা,
কাঁকড়ার ডিম চাই, চাই যে গরম চা।
নাহয় খরচা হবে, মাথা হবে হেঁট কি?

মনে রেখো বড় মাপে করা চাই আয়োজন,
কলেবর খাটো নয়, তিন মণ প্রায় ওজন।
খোঁজ নিয়ো ঝরিয়াতে জিলিপির রেট কী।।


--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--


২৫ অক্টো, ২০১৬

ভয় পেয়ো না


ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না-- 
সত্যি বলছি কুস্তি করে তোমার সঙ্গে পারব না।
মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই,
তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই!
মাথায় আমার শিং দেখে ভাই ভয় পেয়েছ কতই না--
জানো না মোর মাথার ব্যারাম, কাউকে আমি গুঁতোই না?
এস এস গর্তে এস, বাস করে যাও চারটি দিন,
আদর করে শিকেয় তুলে রাখব তোমায় রাত্রি দিন।
হাতে আমার মুগুর আছে তাই কি হেথায় থাকবে না?
মুগুর আমার হাল্‌কা এমন মারলে তোমায় লাগবে না।
অভয় দিচ্ছি, শুনছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা?
বসলে তোমার মুণ্ডু চেপে বুঝবে তখন কাণ্ডটা!
আমি আছি, গিন্নি আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে--
সবাই মিলে কামড়ে দেব মিথ্যে অমন ভয় পেলে।

--সুকুমার রায়--

২১ মে, ২০১৬

সহজ পাঠ থেকে...

 
 
সেদিন ভোরে দেখি উঠে
বৃষ্টি বাদল গেছে ছুটে,
রোদ উঠেছে ঝিলমিলিয়ে
বাঁশের ডালে ডালে।
ছুটির দিনে কেমন সুরে
পুজোর সানাই বাজায় দূরে,
তিনটে শালিখ ঝগড়া করে
রান্নাঘরের চালে।
শীতের বেলায় দুই পহরে
দূরে কাদের ছাদের প'রে
ছোট্ট মেয়ে রোদ্‌দুরে দেয়
বেগ্‌নি রঙের শাড়ি।
চেয়ে চেয়ে চুপ করে রই--
তেপান্তরের পার বুঝি ওই,
মনে ভাবি ওইখানেতেই
আছে রাজার বাড়ি।
থাকত যদি মেঘে -ওড়া
পক্ষীরাজের বাচ্ছা ঘোড়া
তক্ষনি যে যেতেম তারে
লাগাম দিয়ে ক'ষে;
যেতে যেতে নদীর তীরে
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমিরে
পথ শুধিয়ে নিতেম আমি
গাছের তলায় ব'সে।।
 
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--
 
 

হাট

 
 
 
কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি
বোঝাই করা কলশি-হাঁড়ি.
গাড়ি চালায় বংশীবদন,
 সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন।
হাট বসেছে শুক্রবারে
বক্‌শিগঞ্জে পদ্মাপারে।
  জিনিসপত্র জুটিয়ে এনে
  গ্রামের মানুষ বেচে কেনে।
উচ্ছে বেগুন পটল মুলো,
বেতের বোনা ধামা কুলো,
সর্ষে ছোলা ময়দা আটা,
   শীতের র‍্যাপার নকশা কাটা,
ঝাঁঝরি কড়া বেড়ি হাতা,
শহর থেকে সস্তা ছাতা।
  কলশি ভরা এখো গুড়ে
  মাছি যত বেড়ায় উড়ে।
খড়ের  আঁটি নৌকো বেয়ে
আনল ঘাটে চাষির মেয়ে।
  অন্ধ কানাই পথের 'পরে
  গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে।
পাড়ার ছেলে স্নানের ঘাটে
জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে।।
 
 --রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--

 
 

৭ এপ্রি, ২০১৬

সূচনা



এসব কথা শুনলে তোদের লাগবে মনে ধাঁধা,
কেউ বা বুঝে পুরোপুরি কেউ বা বুঝে আধা। 

করে বা কই কিসের কথা, কই  যে দফে দফে,
গাছের 'পরে কাঁঠাল দেখে তেল মেখ না গোঁফে। 

একটি একটি কথায়  যেন সদ্য দাগে কামান,
মন বসনের ময়লা ধুতে তত্ত্বকথাই সাবান।

বেশ বলেছ, ঢের  বলেছ,ঐখেনে দাও দাঁড়ি,
হাটের  মাঝে ভাঙবে কেন বিদ্যে বোঝাই হাঁড়ি।

-সুকুমার রায়-

২৫ ফেব, ২০১৬

পোষা জানোয়ার

লীলা মজুমদার


আমাদের এক চেনা বাড়িতে মানু আর পানু বলে দুই ভাই, তাদের মা-বাবার সঙ্গে থাকত। 
এক বাদলা দিনে মানু পানু দেখে দুটো খুদে খুদে কুকুরছানাকে কে যেন ওদের বাড়ির সামনে, পথের ধারে ফেলে দিয়ে গেছে।
সবে চোখ ফুটেছে, কুৎকুৎ করে চাইছে। কাদা মেখে, এ ওর গায়ে উঠছে, পড়ছে; কুঁইকুঁই করে কাঁদছে। তাই দেখে ছেলেদের বড় মায়া হল। ওরা ওদের কাদা থেকে তুলে, বুকে করে, বাড়ি নিয়ে এল। সদর দরজা দিয়ে নয়। খিড়কি দোর দিয়ে ঢুকে, আগে রান্নাঘরে গিয়ে, রঘুয়ার কাছ থেকে গরম জল নিয়ে, কুকুরছানা ধুয়ে, বাসন-মোছা ন্যাকড়া দিয়ে মুছিয়ে, শুকিয়ে নিল। রঘুয়া একটা তোবড়ানো বাসনে একটু গরম দুধও দিল। ছোট ছোট লাল জিব দিয়ে ওরা কতক খেল, কতক গায়ে মাখল, কতক মাটিতে ফেলল, আবার চেটেও নিল। 
তাই দেখে ঘরের সকলে ওদের কত আদর করল। ওরাও সকলের মুখ চেটে দিল।
এমন সময় মা এসে ঘরে ঢুকলেন। ছানা দেখে তাঁর চোখ কপালে উঠল!
"এ মা! নেড়ি কুকুরের ছানা আবার কে ঘরে ঢোকাল! তোদের বাবা দেখলে রেগে যাবেন।"
ঠিক এই সময় ছানা দুটো এগিয়ে এসে, মায়ের পা চাটতে লাগল! মা তো গলে জল। দুটোকে দু হাতে তুলে নিয়ে, বাবাকে দেখাতে চললেন। 
গোড়ায় বাবা লাফিয়ে উঠেছিলেন!--"এ রাম! ছি ছি! নেড়ি কুকুরের ছানা ঘরে ঢোকাতে নেই। কুকুর চাও তো বাসুকে বলি। তার কেনেল থেকে ভালো জাতের কুকুর দেবে।"
মা বললেন, "পথে ফেলে দিলে এতটুকু ছানা কখনো বাঁচে?"
বাবা বললেন, "তবে রাখো। দেখো যেন বসবার ঘরে শোবার-ঘরে না ঢোকে।"
এই বলে কাগজ পড়তে লাগলেন। একটু আদরও করলেন না।
ছানা দুটো থেকে গেল। একটা কালোর ওপর সাদা ফুটকি। তার নাম কেলো। একটার সাদার ওপর কালো ফুটকি। তার নাম ধেলো।
তারা সারাদিন গলিতে দৌড়াদৌড়ি করে। যা দেওয়া যায়, চেটেপুটে খায়। বাড়ির লোক দেখলে নেচে-কুঁদে সারা। বাইরের লোক এলে চেঁচিয়ে পাড়া মাত। সারা রাত চটের ওপর শুয়ে, রান্নাঘরের বারান্দায় একটানা ঘুম। তবে এতটুকু আওয়াজ পেলেই সাড়া দেয়। বেশ চলেছিল মাস দুই।
তারপর একদিন বাসুকাকু এসে বললেন, "ওরে মানু পানু তোদের জন্য খাস আএক বিলিতি কুকুরের ছানা এনেছি। তাকে একবার দেখলে আর ঐ নেড়িয়েলের ছানার দিকে ফিরেও তাকাবি না। ও-দুটোকে তাড়িয়ে দে। তাহলে সেটাকে দিয়ে যাই।
বাবা কিছু বললেন না। 
মানু বলল, "তাড়ালেও যাবে না। আবার ফিরে আসবে।"
বাসুকাকা রেগে গেলেন, "খেতে না দিলে, আর এলেই লাঠিপেটা করে ভাগালে, কেমন না যায় দেখে যাবে।"
বাবা তবু কিছু বললেন না। মানু পানু ঘর থেকে চলে গেল।
রান্নাঘরের রোয়াকে, কুকুর কোলে দুজনে বসল।
মানু বলল, "তোর কত টাকা আছে রে?"
পানু বলল, "কেন, পাঁচ টাকা। তোর কত?"
মানু বলল, "আমারও তাই।"
পানু বলল, "দশ টাকা তো অনেক টাকা। চল্‌ আমরা কেলো-ধেলোকে নিয়ে পালাই।"
মানু বলল, "যত দূরে পারি। এক্ষুনি।"
পানু বলল, "তাই চল। টাকাগুলো নেব। দুটো গামছা আর ওদের গলায় বাঁধার দড়ি আর দুটো বেঁটে লাঠিও নেব। আমরা খেটে খাব, গাছতলায় শোব। ওদের আমাদের খাবারের ভাগ দেব। চল্‌।"
যেমন কথা তেমনি কাজ।
দেখতে দেখতে শহর ছেড়ে ধানক্ষেত। ধানক্ষেতের পর আম বন। সেহানে গেলে চাকরি পাবে না। তাছাড়া, বাঘ থাকলে কেলো-ধেলোকে খেয়ে নিতে পারে। পথে পথে চলাই ভালো।
এদিকে কুকুরছানারা আর হাঁটতে চায় না। একটু দূর যায়, আবার বসে পড়ে। কোলে নিয়ে হাঁটতে হয়। হাত ব্যথা করে। শেষটা কেলো-ধেলোকে গামছায় বেঁধে, পুঁটলির মতো পিঠে ঝুলিয়ে হাঁটতে হল। 
হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে, রোদ পড়ে এল। পায়ে ব্যথা করতে লাগল। কেলো-ধেলোর ওজন বাড়তে লাগল। সূর্য ডুবে গেল। আর তো পারা যায় না। তখন একটা গাছে ঠেস দিয়ে বুসে পড়ে দুজনে একটু কেঁদে নিল। তারপর ঘুমিয়েও পড়ল। পোঁটলা-বাঁধা কেলো-ধেলোকে কোলে নিয়ে। তারাও ঘুমিয়ে কাদা।
হঠাৎ চোখে-মুখে আলো পড়ল। হইচই শোনা গেল। কেলো-ধেলো পুঁটলির ভিতর থেকে মহা ডাকাডাকি শুরু করল।
কে যেন চেঁচাতে লাগল, "পাওয়া গেছে! পাওয়া গেছে! আর ভয় নেই!"
একটা গাড়ির হেডলাইটে চারদিক আলোয় আলো। গাড়ির দরজা  খুলে মা-বাবা নেমে, ছুটে এসে, কুকুরছানা আর ছেলেদুটোকে জড়িয়ে ধরলেন।
আরো কারা যেন ভিড় করেছিল। ঘুমের ঘোরে ততটা মালুম ছিল না। মা-বাবা ওদের কুকুর-কোলেই গাড়িতে তুলে, বাড়িমুখো চললেন।
ঘুমঘুম সুরে মানু বলল, "কেলো-ধেলোকে খেতে দেবে?"
মা বললেন, "না তো কী শুকিয়ে রাখব?"
"মেরে তাড়িয়ে দেবে না?"
বাবা হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে বললেন, "কেন দেব? আমাদের কি দয়া-মায়া নেই?--উঃ! গিছি! গিছি! গিছি!"
আসলে কিছুই হয়নি। বাবার কানটা মুখের কাছে পেয়ে, কুট করে কেলো একটু কামড়ে দিয়েছিল।
সে যাই হোক। এখন ওদের বাড়ি গিয়ে দেখে এসো। কেলো-ধেলো বাড়িময় ঘুরে বেড়ায়। ছেলেদের খাটের পাশে নতুন চটের উপর ঘুমোয়। ওদের চেন কলার কেনা হয়েছে। তাই পরিয়ে, হাতে একটা বেঁটে লাঠি নিয়ে, বাবা নিজে ওদের রোজ দু বেলা হাঁটান।।