১১ ফেব, ২০১৬

কাঠঠোকরা

 
কাঠঠোকরা ঠকর ঠাঁই!
বনের সেপাই ঘুমটি নাই।
পোশাক-আশাক মজাদার,
লাল পাগড়ি জমাদার।
গাছের গায়ে আটকে নখ
ঠোকর মারে ঠকাঠক।
গর্ত খুঁড়ে গাছের গায়ে
তারই ভিতর রাত কাটায়।
ঠক-ঠকাঠক করছে কে?
কাঠঠোকরায় তাল ঠোকে।।
 


 

বুলবুল

 

চুলবুল বুলবুল
কোন্‌ পাখি তার তুল?
মিঠে শিস তুলছে
ঝুঁটি খানা দুলছে।
গাছে পাতা পত্তর
ঝিরিঝির দিন ভর,
ফুলকলি ফুটল,
বুলবুলি ছুটল।।
 

১০ ফেব, ২০১৬

বাবুই


বাবুই পাখির বাসা দোলে
গাছের ডালে পাতার কোলে।
ঝুলছে যেন বোতলখানা
বাজার থেকে সদ্য আনা।
ঘরের মাঝে রাত্রি হলে
জোনাক পোকার পিদিম জ্বলে।
বাবুই পাখির বাসাটি
দেখতে কেমন খাসাটি!
 

হাঁস

 
 
ওই দ্যাখো প্যাঁক প্যাঁক
হাঁস গুলো চলে,
খালে বিলে ঝিলে ওরা
চলে দলে দলে।
টুপ-টাপ দেয় ডুব
জলের তলায়,
গুগলি শামুক তুলে
ঠোঁটে ভেঙ্গে খায়।
হাঁস চলে আকাশেতে
হাঁস ভাসে জলে,
ডাঙ্গা দিয়ে গুটি গুটি
দেখো তারা চলে।

 

৯ ফেব, ২০১৬

নরহরি দাস

যেখানে মাঠের পাশে বন আছে, আর বনের ধারে মস্ত পাহাড় আছে, সেইখানে, একটা গর্তের ভেতরে একটা ছাগলছানা থাকত। সে তখনো বড় হয়নি, তাই গর্তের বাইরে যেতে পেত না।
বাইরে যেতে চাইলেই তার মা বলত,
"যাসনে! ভালুকে ধরবে, বাঘে নিয়ে যাবে, সিংহে খেয়ে ফেলবে!"
তা শুনে তার ভয় হত, আর সে চুপ করে গর্তের ভিতরে বসে থাকত।  তারপর সে একটু বড় হল, তার ভয়ও কমে গেল। তখন তার মা বাইরে চলে গেলেই সে গর্তের ভিতর থেকে উঁকি মেরে দেখত। শেষে একদিন একেবারে গর্তের বাইরে চলে এল।
সেইখানে এক মস্ত ষাঁড় ঘাস খাচ্ছিল।
ছাগলছানা আর এত বড় জন্তু কখনো দেখেনি। কিন্তু তার শিং দেখেই সে মনে করে নিল, ওটাও ছাগল, খুব ভাল জিনিস খেয়ে এত বড় হয়েছে। তাই সে ষাঁড়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
"হ্যাঁগা, তুমি কী খাও?"
ষাঁড় বলল, "আমি ঘাস খাই।"
ছাগলছানা বলল, "ঘাস তো আমার মাও খায়, সে তো তোমার মতো এত বড় হয়নি।"
ষাঁড় বলল,  "আমি তোমার মায়ের চেয়ে ঢের ঢের ভালো ঘাস অনেক বেশি করে খাই।"
ছাগলছানা বলল, "সে ঘাস কোথায়?"
ষাঁড় বলল, "ওই বনের ভিতরে।"
ছাগলছানা বলল, "আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে।"
একথা শুনে ষাঁড় তাকে নিয়ে গেল।
সেই বনের ভিতরে খুব চমৎকার ঘাস ছিল। ছাগলছানার পেটে যত ঘাস ধরল, সে তত ঘাস খেল। খেয়ে তার পেট এমনি ভারী হল যে, সে আর চলতে পারে না।
সন্ধে হলে ষাঁড় এসে বলল, "এখন চলো বাড়ি যাই।"
কিন্তু ছাগলছানা কী করে বাড়ি যাবে? সে চলতেই পারে না।
তাই সে বলল, "তুমি যাও, আমি কাল যাব।"
তখন ষাঁড় চলে গেল। ছাগলছানা একটি গর্ত দেখতে পেয়ে তার ভিতরে ঢুকে রইল।
সেই গর্তটা ছিল এক শিয়ালের।
সে তার মামা বাঘের বাড়ী নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিল। রাত্রে ফিরে এসে দেখে, তার গর্তের ভিতর কীরকম একটা জন্তু ঢুকে রয়েছে। ছাগলছানাটা কালো ছিল, তাই শিয়াল অন্ধকারের ভিতর ভালো করে দেখতে পেল না।
সে ভাবল বুঝি রাক্ষস-টাক্ষস হবে। এই মনে করে সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
"গর্তের ভিতর কে ও?"
ছাগলছানাটা ভারি বুদ্ধিমান ছিল, সে বলল,
"লম্বা লম্বা দাড়ি
ঘন ঘন নাড়ি।
সিংহের মামা আমি নরহরি দাস
পঞ্চাশ বাঘে মোর এক এক গ্রাস!"

শুনেই তো শিয়াল "বাবা গো!" বলে সেখান থেকে দে ছুট! এমন ছুট দিল যে একেবারে বাঘের ওখানে গিয়ে তবে সে নিশ্বাস ফেলল।
বাঘ তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, "কী ভাগনে, এই গেলে আবার এখনই এত ব্যস্ত হয়ে ফিরলে যে!"
শিয়াল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, "মামা,  সর্বনাশ তো হয়েছে, আমার গর্তে এক নরহরি দাস এসেছে। সে বলে কিনা যে পঞ্চাশ বাঘে তার এক গ্রাস!"
তা শুনে বাঘ ভয়ানক রেগে বলল, "বটে, তার এত বড় আস্পর্ধা! চলো তো ভাগনে!তাকে দেখাব কেমন পঞ্চাশ বাঘে তার এক গ্রাস!"

শিয়াল বলল, "আমি আর সেখানে যেতে পারব না, আমি সেখানে গেলে যদি সে হাঁ করে আমাদের খেতে আসে, তা হলে তুমি তো দুই লাফেই পালাবে। আমি তো তেমন ছুটতে পারব না, আর সে ব্যাটা আমাকেই ধরে খাবে।"
বাঘ বলল, "তাও কী হয়? আমি কখনো তোমাকে ফেলে পালাবো না।"
শিয়াল বলল, "তবে আমাকে তোমার ল্যাজের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে চলো।"
তখন বাঘ তো শিয়ালকে বেশ করে ল্যাজের সঙ্গে বেঁধে নিয়েছে, আর শিয়াল ভাবছে, "এবারে আর বাঘমামা আমাকে ফেলে পালাতে পারবে না।"
এমনি করে তারা দুজনে শিয়ালের গর্তের কাছে এল। ছাগলছানা দূর থেকেই তাদের দেখতে পেয়ে শিয়ালকে বলল--
"দূর হতভাগা! তোকে দিলুম দশ বাঘের কড়ি,
এক বাঘ নিয়ে এলি লেজে দিয়ে দড়ি!"
শুনেই তো ভয়ে বাঘের প্রাণ উড়ে গিয়েছে। সে ভাবল যে, নিশ্চয় শিয়াল তাকে ফাঁকি দিয়ে নরহরি দাসকে খেতে দেবার জন্য এনেছে।  তারপর সে কি আর সেখানে দাঁড়ায়! সে পঁচিশ হাত লম্বা এক-এক লাফ দিয়ে শিয়ালকে সুদ্ধ নিয়ে পালাল। শিয়াল বেচারা মাটিতে আছাড় খেয়ে, কাঁটার আঁচড় খেয়ে, খেতের আলে ঠোক্কর খেয়ে একেবারে যায় আর কী!
শিয়াল চেঁচিয়ে বলল, "মামা আল! মামা, আল!"
তা শুনে বাঘ ভাবে বুঝি সে  নরহরি দাস এল, তাই সে আরও বেশি করে ছোটে। এমনি করে সারারাত ছোটাছুটি করে সারা হল।
সকালে ছাগলছানা বাড়ি ফিরে এল।
শিয়ালের সেদিন ভারি সাজা হয়েছিল। সেই থেকে বাঘের উপর তার এমনি রাগ হল যে, সে রাগ আর কিছুতেই গেল না।।
 

--উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী--
 

৮ ফেব, ২০১৬

লিচু-চোর

বাবুদের তালপুকুরে 
হাবুদের ডালকুকুরে 
সেকি বাস করলে তাড়া 
বলি থাম, একটু দাড়া। 

পুকুরের ঐ কাছে না 
লিচু এক গাছ আছে না 
হঠা না আস্তে গিয়ে 
য়্যাব্বড় এক কাস্তে নিয়ে।

গাছে গিয়ে যেই চড়েছি 
ছোট এক ডাল  ধরেছি,
ও বাবা মড়াত করে 
পড়েছি সরত জোরে।

পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই ,
যে ছিল গাছের আড়েই। 
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার 

দিলে খুব কিল ও ঘুষি 
একদম জোরসে ঠুসি। 
আমিও বাগিয়ে থাপড় 
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড় 

লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল 
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
ও বাবা শেয়াল কোথা !
ভুলোটা দাড়িয়ে হোথা

দেখে যেই আতকে ওঠা 
কুকুরও জারলে ছোটা!
আমি কই  কম্ম কাবার 
কুকুরেই করবে সাবাড় 

বাবা গো , মা গো  বলে 
পাঁচিলের ফোকল গলে 
ঢুকি গিয়ে বোসেদের  ঘরে 
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে। 

যাব আর? কান মলি ভাই!
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা,
কুকুরের চামড়া খিঁচা !

সেকি ভাই যায় রে ভুলা!
মালির ঐ  পিটুনিগুলা!
কি বলিস? ফের হপ্তা!
তৌবা নাক খপ্তা।...

--কাজী নজরুল ইসলাম--


মাসি গো মাসি

 
মাসি গো মাসি পাচ্ছে হাসি
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম,
হাতীর মাথায় ব্যাং-এর ছাতা
কাগের বাসায় বগের ডিম।।
--সুকুমার রায়--